ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ | |||||
---|---|---|---|---|---|
খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন | |||||
সৌদি আরবের বাদশাহ | |||||
Reign | ২ নভেম্বর ১৯৬৪ – ২৫ মার্চ ১৯৭৫ | ||||
Bay'ah | ২ নভেম্বর ১৯৬৪ | ||||
পূর্বসূরি | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
উত্তরসূরি | খালিদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
সৌদি আরবের রিজেন্ট | |||||
কার্যকাল | ৪ মার্চ ১৯৬৪ – ২ নভেম্বর ১৯৬৪ | ||||
Monarch | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী | |||||
কার্যকাল | ১৬ আগস্ট, ১৯৫৪ – ২১ ডিসেম্বর ১৯৬০ | ||||
পূর্বসূরি | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
উত্তরসূরি | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
কার্যকাল | ১৯৬২ – ২৫ মার্চ ১৯৭৫ | ||||
পূর্বসূরি | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
উত্তরসূরি | খালিদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
সৌদি আরবের যুবরাজ | |||||
কার্যকাল | ৯ নভেম্বর ১৯৫৩ – ২ নভেম্বর ১৯৬৪ | ||||
Monarch | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
পূর্বসূরি | সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
উত্তরসূরি | খালিদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
পররাষ্ট্র মন্ত্রী | |||||
কার্যকাল | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৩০ – ২২ ডিসেম্বর ১৯৬০ | ||||
Monarch | আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান সৌদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
পূর্বসূরি | "প্রতিষ্ঠিত | ||||
উত্তরসূরি | ইব্রাহিম বিন আবদুল্লাহ আল সুওয়াইয়েল | ||||
কার্যকাল | ১৬ মার্চ, ১৯৬২ – ২৫ মার্চ ১৯৭৫ | ||||
Monarch | সৌদ বিন আবদুল আজিজ নিজে | ||||
পূর্বসূরি | ইব্রাহিম বিন আবদুল্লাহ আল সুওয়াইয়েল | ||||
উত্তরসূরি | সৌদ আল ফয়সাল | ||||
হেজাজের ভাইসরয় | |||||
কার্যকাল | ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ – ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ | ||||
Monarch | আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান | ||||
উত্তরসূরি | খালিদ বিন আবদুল আজিজ | ||||
জন্ম | ১৪ এপ্রিল ১৯০৬ রিয়াদ, রিয়াদ আমিরাত | ||||
মৃত্যু | ২৫ মার্চ ১৯৭৫ রিয়াদ, সৌদি আরব | (বয়স ৬৮)||||
সমাধি | ২৬ মার্চ, ১৯৭৫ আল-অউদ কবরস্থান, রিয়াদ | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | তালিকা
| ||||
বংশধর অন্যদের মধ্যে... | তালিকা
| ||||
| |||||
রাজবংশ | House of Saud | ||||
পিতা | আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ | ||||
মাতা | বিনতে আবদুল্লাহ আল শেখ | ||||
স্বাক্ষর |
ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (আরবি: فيصل بن عبد العزيز آل سعود; Fayṣal ibn ‘Abd al-‘Azīz Āl Su‘ūd; ১৪ এপ্রিল ১৯০৬ – ২৫ মার্চ ১৯৭৫, বাদশাহ ফয়সাল হিসেবে বেশি পরিচিত) ছিলেন সৌদি আরবের বাদশাহ। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই দায়িত্বপালন করেছেন। বাদশাহ হিসেবে তিনি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং আধুনিকীকরণ ও সংস্কারে সফল হন। তার বৈদেশিক নীতির মূল দিক ছিল প্যান ইসলামিজম, কমিউনিজম বিরোধিতা, ফিলিস্তিনি দাবির সমর্থন।[১][২] তিনি দেশের আমলাতন্ত্রকে সফলভাবে সংহত করেন। সৌদিদের মধ্যে তার শাসন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।[৩] ১৯৭৫ সালে তার ভাইপো ফয়সাল বিন মুসাইদের হাতে তিনি নিহত হন।
১৯০৬ সালের ১৪ এপ্রিল ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫][৬] তিনি তার বাবার তৃতীয় সন্তান।[৭] তার মা তারফা বিনতে আবদুল্লাহ বিন আবদুল লতিফ আল শাইখ।[৮] ১৯০২ সালে রিয়াদ জয়ের পর আবদুল আজিজ তাকে বিয়ে করেন। ফয়সালের মা ছিলেন আল আশ শাইখ পরিবারের সদস্য যা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের বংশধর।[৯][১০] ফয়সালের নানা আবদুল্লাহ বিন আবদুল লতিফ ছিলেন আবদুল আজিজের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষক ও উপদেষ্টা।[১১][১২]
১৯১২ সালে ফয়সালের মা মারা যান। এরপর তিনি তার নানার কাছে প্রতিপালিত হন। নানার কাছে তিনি কুরআন ও ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা করেন। এই শিক্ষা তাকে আজীবন প্রভাবিত করেছে।
ফয়সালের একমাত্র বোন নুরাহর সাথে তার এক চাচাত ভাই খালিদ বিন মুহাম্মদের বিয়ে হয়।[১৩]
সাহসিকতাকে প্রচুর মূল্য ও সম্মান দেয়া হয় এমন পরিবেশে ফয়সাল বেড়ে উঠেন। অন্যান্য সৎভাইদের তুলনায় এ দিক থেকে তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন। তার মায়ের কাছ থেকে তিনি গোত্রীয় নেতৃত্ব বিকাশের উৎসাহ পেয়েছিলেন।[১৪]
১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার বাদশাহ আবদুল আজিজকে লন্ডন আমন্ত্রণ জানায়।[১৫] তিনি যেতে না পারায় ১৪ বছর বয়সী ফয়সালকে পাঠানো হয়। যুক্তরাজ্য ভ্রমণে যাওয়া তিনি প্রথম সৌদি রাজকীয় ব্যক্তিত্ব।[১৫] তিনি সেখানে পাঁচ মাস অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেন।[১৫] একই সময়ে তিনি ফ্রান্স সফর করেন। রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সে আসা সৌদি রাজকীয় ব্যক্তি হিসেবেও তিনি সর্বপ্রথম।[১৬]
বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের জ্যেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম হওয়ায় ফয়সাল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেছেন। হাইল বিজয় ও আসিরের উপর প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণের পর ১৯২২ সালে তাকে ছয় হাজার যোদ্ধার সাথে এসকল প্রদেশে পাঠানো হয়। বছরের শেষনাগাদ তিনি আসিরের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন।[১৭][১৭]
১৯২৫ সালে ফয়সাল হেজাজে বিজয় অর্জন করেন। তাকে ও মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজকে ইখওয়ানের দায়িত্ব দেয়া হয়।[১৮] ১৯২৬ সালে ফয়সাল হেজাজের শাসক নিয়োগ পান।[১৯] শাসনামলে তিনি প্রায়ই স্থানীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করতেন।[২০]
১৯৩০ সালে ফয়সাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। বাদশাহ হওয়ার পরও এই দায়িত্ব পালন করেছেন।[২১] এসময় তিনি কয়েকবার ইউরোপ সফর করেছেন। ১৯৩২ সালে তিনি পোল্যান্ড ও ১৯৩৩ সালে রাশিয়া সফর করেন।[২২][২৩]
ফয়সালের বড় ভাই সৌদ বিন আবদুল আজিজ বাদশাহ হওয়ার পর ফয়সালকে যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাদশাহ সৌদ ব্যয়বহুল কাজে হাত দিয়েছিলেন যার মধ্যে ছিল রাজধানী রিয়াদে প্রান্তে বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ।[১] মিশরের দিক থেকেও সৌদ হুমকি অনুভব করছিলেন। জামাল আবদেল নাসের ১৯৫২ সালে মিশরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেছিলেন। মিশরে পালিয়ে যাওয়া তালাল বিন আবদুল আজিজ ও তালালের প্রভাবিত প্রিন্সদেরকে নাসের ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। সৌদের ব্যয়বহুল নীতির কারণে ও বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে তার অসফলতার জন্য রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্য ও উলামারা ফয়সালকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সৌদের উপর চাপ দেন।[২৪] এই নতুন অবস্থানে ফয়সাল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যয় কমিয়ে আনেন। অর্থনীতিতে তার এই পদক্ষেপ তার আমলের গুরুত্বপূর্ণ ছাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে।
বাদশাহ সৌদ ও যুবরাজ ফয়সালের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফয়সাল প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগ করেন। বাদশাহ সৌদ ফয়সালের নির্বাহী ক্ষমতা ফিরিয়ে নেন এবং প্রিন্স তালালকে মিশর থেকে ফিরিয়ে এনে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।[২৫] ১৯৬২ সালে ফয়সাল রাজপরিবারের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন এবং দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হন।[২৪]
এসময় যুবরাজ ফয়সাল সংস্কার ও আধুনিকীকরণকারী হিসেবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হন।[১] রক্ষণশীল মহলের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও তিনি নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটান। সমস্যা সৃষ্টি না হওয়ার জন্য তিনি ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে নারী শিক্ষার কারিকুলাম লিপিবদ্ধ ও তদারক করান। এই নীতি তার মৃত্যুর অনেক পর পর্যন্ত টিকে ছিল।
১৯৬৩ সালে যুবরাজ ফয়সাল দেশে প্রথমবারের মত টেলিভিশন স্টেশন স্থাপন করেন। তবে মূল প্রচার শুরু হতে আরো দুই বছর সময় লাগে।[২৬] আর অন্যান্য অনেক নীতির মত দেশের ধর্মীয় ও রক্ষণশীল অংশ এর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। ফয়সাল তাদের নিশ্চিত করেন যে ইসলামের নৈতিকতার মাপকাঠি কঠোরভাবে মেনে চলা হবে এবং বেশি মাত্রায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
যুবরাজ ফয়সাল ১৯৬১ সালে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এটি একটি বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা। সৌদি রাজপরিবার এতে বিলিয়ন ডলারের বেশি দান করেছে বলা হয়ে থাকে।[২৭]
এসময় নেপত্থে বাদশাহ সৌদের সাথে ফয়সালের দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। বাদশাহ চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেলে তার অনুপস্থিতিতে ফয়সাল আরো বেশি ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি সৌদের অনেক অনুগতকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেন।[২৮][২৯] নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন তার ভাই ও ভবিষ্যত বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ যাকে এসময় ন্যাশনাল গার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়। বাদশাহ সৌদ ফিরে আসার পর ফয়সাল দাবি করেন যাতে তাকে দায়িত্ব দিয়ে সৌদ নিজে আনুষ্ঠানিক অবস্থান গ্রহণ করেন। এসময় ফয়সালের পক্ষে উলামাদের সমর্থন ছিল।
বাদশাহ সৌদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। ফয়সাল ন্যাশনাল গার্ডকে সৌদের প্রাসাদ ঘিরে ফেলার আদেশ দেন। শেষপর্যন্ত রাজপরিবারের সিদ্ধান্ত ও উলামাদের মতের কারণে সৌদ ক্ষমতা তার ফয়সালকে দিয়ে দেন। ১৯৬৪ সালের ২ নভেম্বর ফয়সালকে বাদশাহ ঘোষণা করা হয়।[২৪][২৯] এরপর সৌদ বিন আবদুল আজিজ গ্রীসে নির্বাসনে যান।
ক্ষমতায় আসার পর ফয়সাল একটি ভাষণে বলেন,[৩০] “আমি আপনাদের কাছে নিবেদন করছি, ভাইয়েরা, আমাকে ভাই ও সেবক হিসেবে আমার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। ‘মহিমা’ (ম্যাজেস্টি) শুধু আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত এবং 'মুকুট' হল আসমান ও জমিনের মুকুট।" বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ রাজকীয় পদবির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। ফয়সাল সেগুলোর বিস্তার ঘটান। বাদশাহ আবদুল আজিজের সরাসরি বংশধরদেরকে "হিজ রয়েল হাইনেস" ও আবদুল আজিজের ভাই বা সেরূপ সম্পর্কিত হলে তাদের "হিজ হাইনেস" বলে সম্বোধন করার নিয়ম ছিল। আল সৌদের অন্য কোনো শাখার সদস্য হলে "হিজ এক্সিলেন্সি" বলার রীতি ছিল।[৩১]
১৯৬৭ সালে ফয়সাল দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করেন এবং প্রিন্স ফাহাদকে সেই পদে নিয়োগ দেন।[৩২]
ক্ষমতারোহণের পর ফয়সাল দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকে প্রধান কর্তব্য হিসেবে গুরুত্ব দেন। শাসনের প্রথমদিকে তিনি তার রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতি চালু রাখেন এবং দেশের বাজেটে ভারসাম্য রক্ষায় তার লক্ষ্য সফল হয় ও তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
শাসনের শুরুতে সকল সৌদি রাজপুত্রকে তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠানোর পরিবর্তে দেশের ভেতর লেখাপড়া শেখাতে হবে মর্মে আদেশ জারি করেন। ফলে দেশের উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের দেশে এনে লেখাপড়া করাতে থাকে।[৩৩] ফয়সাল দেশের বর্তমান প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর প্রবর্তন করেন এবং আধুনিক কল্যাণ ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বিচার মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে প্রথমবার “পাঁচ বছরব্যপী পরিকল্পনা” শুরু করেন।[৩৪]
১৯৬৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিভিশন প্রচার শুরু হয়। ১৯৬৬ সালে ফয়সাল নামে তার এক ভাইপো নতুন স্থাপিত টেলিভিশন হেডকোয়ার্টারে হামলা চালালে নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়। এই হামলাকারী ফয়সালের ভবিষ্যত হত্যাকারীর ভাই। ফয়সালের হত্যার জন্য এই ঘটনাকে মোটিভ হিসেবে ধরা হয়।[৩৫] দেশের রক্ষণশীল অংশ থেকে তার সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলেও ফয়সাল তার আধুনিকীকরণ চালু রাখেন এবং তার নীতিকে ইসলামের সাথে সংগতিশীল রাখা নিশ্চিত করেন।
১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে এই অঞ্চলে কয়েকটি অভ্যুত্থান হয়। মুয়াম্মার গাদ্দাফির অভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া থেকে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ হয়।[৩৬] তাই ফয়সাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন। তার শাসনের প্রথমদিকে লিখিত সংবিধানের ব্যাপারে দাবি উঠলে তিনি বলেন যে "কুরআন আমাদের সংবিধান"।[৩৭] ১৯৬৯ সালের গ্রীষ্মে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে জেনারেলসহ কয়েকশ সামরিক অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয়।[১][৩৮][৩৯] অভ্যুত্থান মূলত বিমান বাহিনীর অফিসাররা পরিকল্পনা করে এবং তাদের লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে নাসেরপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠা করা।[৩৯] ধারণা করা হয় যে আমেরিকান গোয়েন্দাদের সহায়তায় পরিকল্পনা জানা যায়[৩৬] কিন্তু হুমকি কতটা গভীর ছিল তা স্পষ্ট নয়।
ফয়সাল তার দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রকে স্বীকার করতেন। তিনি ওয়াহাবিদেরকেও কাছে আনেন। তার শাসন শেষ হওয়ার পর সম্প্রদায়গত বিভাজন বৃদ্ধি পায়। ক্ষমতারোহণে সাহায্য করলেও ফয়সালের ক্ষমতালাভের পর উলামাদের প্রভাব হ্রাস পেয়েছিল। আল আশ শাইখ পরিবারের সাথে মায়ের দিক থেকে সম্পর্ক এবং প্যান আরবিজমের বিপক্ষে থাকা প্যান ইসলামিক আন্দোলনে প্রতি তার সমর্থন থাকলেও তিনি উলামাদের ক্ষমতা ও প্রভাব হ্রাস করেন।[৪০] চরমপন্থি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের প্রভাব খর্ব করতে তিনি চেষ্টা চালান। তার আধুনিকীকরণে উলামাদের বিরোধিতাকে তিনি উপেক্ষা করে চলেন।
দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন আল মদিনা কলেজ অব থিওলজির রেক্টর আবদুল আজিজ ইবনে বাজ। ফয়সালের সমালোচনার কারণে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। অনেকে চরমপন্থায় প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এমন অন্যতম চরমপন্থি ছিলেন জুহাইমিন আল ওতাইবি।[৪১]
সৌদি আরবে দাসপ্রথা চালু ছিল। ১৯৬২ সালে জারি করা এক ফরমানে ফয়সাল দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেন। পিটার হুবডের বর্ণনা অনুযায়ী এসময় প্রায় ১৬৮২জন দাস মুক্ত হয় এবং সরকারের খরচ হয় জনপ্রতি ২০০০ মার্কিন ডলার। বিতর্ক রয়েছে যে ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ও বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের মধ্যে আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র দাসপ্রথা উচ্ছেদের বিষয় উত্থাপন করেছিল এবং জন এফ কেনেডি চূড়ান্তভাবে বিষয়টি উত্থাপন করেন।[৪২]
ফয়সাল তার বাবার মত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন এবং সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করেন। ফয়সাল কমিউনিস্ট বিরোধী ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট ব্লকের অন্য কোনো দেশের সাথে কোনো প্রকার রাজনৈতিক সম্পর্ক তিনি রাখতে রাজি ছিলেন না।[১][৪৩] তিনি জায়নবাদের কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং কমিউনিজম ও জায়নবাদকে সম্পর্কিত হিসেবে দেখতেন। যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য পাশ্চাত্য গণতন্ত্রী দেশের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্য সফরে তিনি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে হিরার হার উপহার দেন।
বাদশাহ ফয়সাল আরব বিশ্বের রাজতন্ত্রী ও রক্ষণশীল আন্দোলনকে সমর্থন দেন। তিনি সমাজতন্ত্র ও আরব জাতীয়তাবাদি প্রভাব বিরোধী ছিলেন ও প্যান ইসলামিজমকে এর বিকল্প হিসেবে দেখতেন। শেষের দিকে তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এবং এর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কয়েকটি মুসলিম দেশে ভ্রমণ করেন। প্যান আরবিজমের সমর্থক না হলেও ফয়সাল আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সৌহার্দের আহ্বান অব্যাহত রাখেন।
১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফয়সাল মরক্কোর রাবাতে একটি সম্মেলন আহ্বান করেন। এক মাস আগে আল আকসা মসজিদে হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই সম্মেলন ডাকা হয়। ২৫টি মুসলিম রাষ্ট্রের নেতারা এতে অংশ নেন। এতে ১৯৬৭ সালে অধিকৃত অঞ্চলগুলো ফিরিয়ে দিয়ে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এই সম্মেলনে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।[৪৪]
১৯৭০ সালে নাসেরের মৃত্যুর পর ফয়সাল মিশরের নতুন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতকে কাছে আনেন। আনোয়ার সাদাত নিজেও সোভিয়েত প্রভাব থেকে বের হয়ে আমেরিকাপন্থি শিবিরে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। ১৯৭৩ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের কারণে ফয়সাল আন্তর্জাতিক বাজারে তেল সরবরাহ প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে তেলের মূল্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনা তার কর্মজীবনে উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে এবং বিশ্বব্যপী আরবদের মধ্যে তার জন্য মর্যাদা বয়ে আনে। ১৯৭৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে ম্যান অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে। সংকটের ফলে তেলের মূল্যবৃদ্ধি তার মৃত্যুর পর সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। তেল থেকে পাওয়া নতুন মুনাফা ফয়সালকে ছয় দিনের যুদ্ধের পর মিশর, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে সহায়তা বৃদ্ধিতে সক্ষম করে।[২][৪৫] সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে ফয়সালের তেল প্রত্যাহার করার কারণে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়।[৪৬][৪৭] উল্লেখ্য তার হত্যাকারী অল্পকাল পূর্বেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসে।
ফয়সাল চারবার বিয়ে করেছিলেন।[৪৮] তার তিনজন স্ত্রী প্রভাবশালী সুদাইরি, আল জুলুয়ি ও আল সুনায়েন পরিবারের সদস্য।[৪৯]
তার প্রথম স্ত্রী সুলতানা বিনতে আহমেদ আল সুদাইরি। তিনি সুদাইরি পরিবারের সদস্য ছিলেন।
দ্বিতীয় ও সবচেয়ে বেশি পরিচিত স্ত্রী ছিলেন ইফফাত আল সুনায়েন। তিনি তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানে বড় হন। তিনি ছিলেন ১৮১৮ সালে মিশরীয় বাহিনী কর্তৃক ইস্তানবুল বা কায়রো নিয়ে যাওয়া আল সৌদ পরিবারের বংশধর। ১৯৩২ সালের দিকে তুরস্কে ফয়সালের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় তাদের দেখা হয়।[১৫] তারা জেদ্দায় ফিরে আসেন এবং সেখানে ১৯৩২ সালে তাদের বিয়ে হয়।[১৫][৫০] ফয়সালের অনেক সংস্কার, বিশেষত নারীদের নিয়ে সংস্কারে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রভাব ছিল।[৫১][৫২]
তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন আল জাওহারা বিনতে সৌদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ আল কাবির। তাদের মেয়ের নাম মুনিরা।[৪৮] জাওহারা ছিলেন ফয়সালের আত্মীয়া নুওরা বিনতে আবদুর রহমানের মেয়ে।[৫৩] ১৯৩৫ সালের অক্টোবর তারা বিয়ে করেন।[৫৩]
চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন হায়া বিনতে তুর্কি বিন আবদুল আজিজ আল তুর্কি।[৪৮] ইনি জুলুয়ি গোত্রের সদস্য ছিলেন।[৮][৫৪] তাদের ছেলে হলেন প্রিন্স খালিদ।
অন্যান্য সৌদি বাদশাহদের ছেলেদের চেয়ে ফয়সালের ছেলেরা ব্যতিক্রমী শিক্ষা পেয়েছিলেন। সৌদি সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে তারা দায়িত্বপালন করেছেন। প্রিন্স খালিদ আসির প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। তিন দশক তিনি এই দায়িত্বপালন করেছেন। এরপর তিনি মক্কা প্রদেশের গভর্নর হন। সৌদ বিন ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ ১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেছেন। প্রিন্স তুর্কি সৌদি গোয়েন্দাবিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন এবং যুক্তরাজ্য ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।[৫৫]
ফয়সালের মেয়ে লুলুওয়াহ বিনতে ফয়সাল সৌদি আরবের একজন নারী শিক্ষাকর্মী। ১৯৬২ সালে তার মেয়ে প্রিন্সেস সারা বিনতে ফয়সাল আল নাহদা নামক দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠান উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম চাইলট প্রাইজ ফর হিউমেন রাইটস অর্গানাইজেশন নামক পুরস্কার পায়।[৫৬]
ফয়সাল ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন।[৫৭]
১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ ফয়সালের উপর তার সৎ ভাইয়ের ছেলে ফয়সাল বিন মুসাইদ গুলি চালায়। হামলাকারী এর অল্পকাল আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরে। মজলিসে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শাসকের সাথে নাগরিকদের সাক্ষাত ও আবেদন জানানোর সুযোগ থাকে।[৫৮]
ওয়েটিং রুমে ফয়সাল কুয়েতি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলছিলেন। তারাও ফয়সালের সাথে দেখা করার অপেক্ষায় ছিল।[৫৯] এসময় হামলাকারী তার দিকে এগিয়ে এসে গুলি চালায়। প্রথম গুলি তার চিবুকে লাগে ও দ্বিতীয় গুলি তার কান ঘেষে চলে যায়।[৫৯] একজন রক্ষী তার খাপবদ্ধ তলোয়ার দিয়ে হামলাকারীকে আঘাত করে।[৫৯] হামলাকারীকে হত্যা না করার জন্য তেলমন্ত্রী আহমেদ জাকি ইয়েমেনি বারবার চিৎকার করতে থাকেন।[৫৯]
বাদশাহ ফয়সালকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।[৫৯] এসময় তিনি বেঁচে ছিলেন। হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হলেও তা ব্যর্থ হয় এবং ফয়সাল অল্পসময় পর মারা যান।[৫৯] হামলার আগে ও পরে হামলাকারী শান্ত ছিল বলে জানা যায়।[৫৯] হত্যার পর তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়।[৫৯]
ভাই খালিদ বিন মুসাইদের হত্যার বদলা নেয়ার জন্য ফয়সাল বিন মুসাইদ এই কাজ করেছেন বলে একটি মত রয়েছে। বাদশাহ ফয়সাল দেশে আধুনিক সংস্কার করছিলেন। এসবের ফলে অনেকেই তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। প্রিন্স খালিদ বিন মুসাইদ তাদের অন্যতম। টেলিভিশন ভবনে হামলা করার সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে তিনি মারা যান।[৬০]
প্রিন্স ফয়সাল বিন মুসাইদকে হামলার পরপর গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে মস্তিস্কবিকৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে বিচারে সৌদি চিকিৎসকদের একটি প্যানেল তাকে সুস্থ ঘোষণা করে। বিচারে তার মৃত্যুদন্ড হয় এবং রাজধানী রিয়াদে প্রকাশ্যে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।[৫৯] ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন এই দন্ড কার্যকর করা হয়। এসময় হাজারের বেশি জনতা উপস্থিত ছিল।
মৃত্যুর পরের দিন ২৬ মার্চ ফয়সালের লাশ রিয়াদের আল আউদ কবরস্থানে দাফন করা হয়।[৬১][৬২] জানাজায় তার উত্তরসুরি ও ভাই খালিদ বিন আবদুল আজিজ কেঁদে ফেলেছিলেন।[৬৩]
মৃত্যুর ফয়সালের পরিবার কিং ফয়সাল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।
গায়ক রবার্ট হান্টার ১৯৭৫ সালে ব্লুস ফর আল্লাহ এলবামে বাদশাহ ফয়সালের প্রশংসা করেছেন। ২০১৩ সালে আলেক্সেই ভাসিলেভ কিং ফয়সাল অব সৌদি আরাবিয়া: পারসোনালিটি, ফেইথ এন্ড টাইমস নামক জীবনী প্রকাশ করেছেন।
ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ জন্ম: ১৯০৬ মৃত্যু: ১৯৭৫
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী সৌদ |
সৌদি আরবের বাদশাহ ২ নভেম্বর ১৯৬৪ – ২৫ মার্চ ১৯৭৫ |
উত্তরসূরী খালিদ |
Saudi Arabian royalty | ||
পূর্বসূরী সৌদ |
সৌদি আরবের যুবরাজ ৯ নভেম্বর ১৯৫৩ – ২ নভেম্বর ১৯৬৪ |
উত্তরসূরী মুহাম্মদ |
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
পূর্বসূরী নেই |
সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ১৯৩০–১৯৬০ |
উত্তরসূরী ইবরাহিম বিন আবদুল্লাহ আল সুয়াইয়েল |
পূর্বসূরী ইবরাহিম বিন আবদুল্লাহ আল সুয়াইয়েল |
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৬২–১৯৭৫ |
উত্তরসূরী সৌদ বিন ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ |
পূর্বসূরী সৌদ বিন আবদুল আজিজ |
সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৪–১৯৬০ |
উত্তরসূরী সৌদ বিন আবদুল আজিজ |
পূর্বসূরী সৌদ বিন আবদুল আজিজ |
সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ১৯৬২–১৯৭৫ |
উত্তরসূরী খালিদ বিন আবদুল আজিজ |