সমবর্তন (পোলারায়ন বা পোলারাইজেশন হিসেবেও পরিচিত) হলো আড় তরঙ্গের একটি বৈশিষ্ট্য যা তার স্পন্দনের জ্যামিতিক দিক বিন্যাস নির্দিষ্ট করে (সহজ ভাষায়, বহু তলে স্পন্দনশীল তরঙ্গকে এক তলে স্পন্দনশীল করে)। যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমকোণে অগ্রসর হয় সেটাই আড় তরঙ্গ। পানিতে সৃষ্ট তরঙ্গ হলো আড় তরঙ্গের একটি সহজ উদাহরণ। একটি পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়লে, পানিতে তরঙ্গ সৃষ্ট হয় যা পুকুরের পাড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং একই সাথে পানির কণাগুলি উপরে-নীচে স্পন্দিত হতে থাকে (চিত্র দেখুন)। এখন যদি কোনো যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই তরঙ্গকে একটিমাত্র তলে স্পন্দিত করা যায় তাহলে ঘটনাটিকে বলা হয় সমবর্তন।[১][২][৩][৪]
আবার, তরল বা গ্যাসের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শব্দ তরঙ্গের ক্ষেত্রে এই স্পন্দন শুধু সামনে পেছনে (তরঙ্গ যেদিকে যায় সেদিকে) হয়। ফলে, এর সমবর্তনও হয় না (এটি অনুদৈর্ঘ তরঙ্গ)।
আলো এক ধরনের তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। অর্থাৎ আলো এক ধরনের আড় তরঙ্গ। সুতরাং আলোর সমবর্তন হয়।
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান অনুযায়ী, আলো হলো ফোটনের ধারা। এক্ষেত্রে আলোর সমবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য ফোটনের স্পিনের ধারণা ব্যবহার করা হয়।
কোনো আধান যুক্ত কণা স্থির থাকলে তার চারপাশে একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের (E) সৃষ্টি হয়। আবার, কোনো আধান যুক্ত কণা যদি সমবেগে ভ্রমণ করতে থাকে তাহলে সেই কণার চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্র (B) তৈরি হয়। তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের সমন্বয়ে তৈরী হয় তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। এই তরঙ্গে তড়িৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের স্পন্দন পরস্পরের সাথে লম্ব ও এরা উভয়ই তরঙ্গ প্রবাহের দিকের সাথে লম্ব। তাই, আলো এক ধরনের আড় তরঙ্গ।
সমবর্তন ঘটানোর জন্য এমন কোনো পদার্থের প্রয়োজন যার মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করলে, তা আলোকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট তল বরাবর স্পন্দনশীল তরঙ্গ হিসেবে নির্গত করে। এই পদার্থ বা যন্ত্রগুলোকে বলা হয় পোলারাইজার।