বের্নার্দো হুসেই | |
---|---|
জন্ম | বের্নার্দো আলবের্তো হুসেই ১০ এপ্রিল ১৮৮৭ |
মৃত্যু | ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১[১] বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা | (বয়স ৮৪)
জাতীয়তা | আর্জেন্টিনীয় |
পরিচিতির কারণ | গ্লুকোজ[১] |
পুরস্কার | চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৪৭) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | শারীরবিজ্ঞান, অন্তঃক্ষরাবিজ্ঞান |
বের্নার্দো আলবের্তো হুসেই (স্পেনীয়: Bernardo Alberto Houssay; জন্ম: ১০ এপ্রিল, ১৮৮৭ - মৃত্যু: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বুয়েনোস আইরেস নগরীতে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা আর্জেন্টিনীয় শারীরবিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে শরীরতত্ত্ব বা চিকিৎসাশাস্ত্রে অনন্য সাধারণ অবদানের প্রেক্ষিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। প্রাণীদের রক্তে চিনির (গ্লুকোজ) পরিমাণ নিরূপণে পিটুইটারি গ্রন্থিতে হরমোনের ভূমিকার বিষয়ে আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে এ পুরস্কার পান বের্নার্দো আলবের্তো হুসেই। দক্ষিণ আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। শর্করার বিপাকপ্রক্রিয়ায় গ্লুকোজের অবদানের বিষয়ে কার্ল ফার্দিনান্দ কোরি ও গারটি কোরির সাথে তিনিও এ পুরস্কার যৌথভাবে ভাগ করে নেন।[১][২][৩][৪]
বের্নার্দো আলবের্তো হুসেই বুয়েনোস আইরেসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতামাতা আলবের ও ক্লারা উসে ফ্রান্স থেকে আর্জেন্টিনায় অভিবাসিত হন।
প্রথিতযশা তরুণ বের্নার্দো আলবের্তো হুসেই ১৪ বছর বয়সে বুয়েনোস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীন ফার্মেসি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ১৭ বছর বয়সে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৪ থেকে ১৯১০ সময়কালে মেডিকেল স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অবস্থায়ই হুসেই গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন ও ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান থেকে সহকারী শিক্ষক মনোনীত হন। স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর তিনি দ্রুত নিজেকে তৈরী করতে থাকেন ও পিটুইটারি যৌগের শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এম.ডি. অভিসন্দর্ভ উপস্থাপন করেন যা ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়টিই তার পরবর্তী বৈজ্ঞানিক কর্মজীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
১৯০৮ সাল থেকে একই বিভাগে সহকারী প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। এর পরপরই ডক্টরেট ডিগ্রী লাভের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী মেডিসিন স্কুলের ফিজিওলজির অধ্যাপক পদে নিযুক্তি লাভ করেন। একইসঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা চর্চা শুরু করেন ও সহকারী চিকিৎসক হিসেবে বুয়েনোস আইরেসের পৌর হাসপাতালে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে আলভিয়ার হাসপাতের প্রধান চিকিৎসক মনোনীত হন। ১৯১৫ সালে বুয়েনোস আইরেসের জাতীয় জনস্বাস্থ্য গবেষণাগারে এক্সপেরিমেন্টাল প্যাথলজি শাখার প্রধান হন।
১৯১৯ সালে বুয়েনোস আইরেস চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়কালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে উচ্চপর্যায়ের মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষণা বিভাগে পরিণত করেন। কিন্তু, উদারপন্থী রাজনৈতিক ধ্যান-ধারনার অধিকারী থাকায় ঐ বছরই সামরিক একনায়কতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের দায়িত্ব থেকে তাকে বরখাস্ত করে। এর ফলে তিনি তার গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাবার সংকল্প গ্রহণ করেন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়ে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ইনস্তিতুতো ডে বায়োলোজিয়া ওয়াই মেডিসিনা এক্সপেরিমেন্টাল প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এ পরিস্থিতিতে ১৯৪৫ সালে পেরনবাদী সরকার তাকে দ্বিতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যা ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। এরপর পেরন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে হুসেইকে বুয়েনোস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদে পুনর্বহাল করা হয়। সেখানে তিনি মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ১৯৫৭ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা কাউন্সিলেরও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
হুসেই শারীরবিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় কাজ করেছেন। তন্মধ্যে, স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকপ্রণালী, শ্বাসপ্রণালী ও রক্তসংবহনতন্ত্র অন্যতম। তবে, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগে শর্করার বিপাক পিটুইটারি গ্রন্থির ভূমিকায় পরীক্ষামূলক তদন্তকার্যে অবদান রাখায় ১৯৪৭ সালে ফিজিওলজি বা চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
হুসেইয়ের অনেক ছাত্রও তার সাথে কাজ করেছেন। তারাও বিশ্বের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করে গেছেন। তন্মধ্যে এদুয়ার্দো ব্রাউন-মেনেন্দেস ও ব্রাজিলীয় স্নায়ু-শারীরবিজ্ঞানের জনকরূপে পরিচিত মিগেল রোলান্দু কভিয়ান অন্যতম। তাদেরকে সাথে নিয়ে মানব শারীরবৃত্ত শীর্ষক অত্যন্ত প্রভাববিস্তারকারী গ্রন্থ প্রকাশ করেন যা লাতিন আমেরিকায় স্পেনীয় ও পর্তুগিজ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৫০ সালে এ গ্রন্থ প্রকাশের পর অনেকগুলো সংস্করণ বের হয় ও মহাদেশের সকল চিকিৎসা বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়। হুসেই ছয় শতাধিক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধসহ বেশকিছুসংখ্যক বিশেষায়িত পুস্তক রচনা করে গেছেন। নোবেল পুরস্কার লাভের পাশাপাশি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে, হার্ভার্ড, ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড ও প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৫টি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬০ সালে এন্ডোক্রিনলজি ডেল মেডেল সোসাইটি অন্যতম।
আর্জেন্টিনাসহ লাতিন আমেরিকায় বিজ্ঞানীদের প্রধান নেতা হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। এছাড়াও, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসা শিক্ষার অগ্রগতিতে তিনি অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে রয়্যাল সোসাইটির বৈদেশিক সদস্যরূপে (ফরমেমআরএস) নির্বাচিত হন।[১]
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে ৮৪ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।