নিকোলা টেসলা | |||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
Nicola Tesla | |||||||||||||||||||||
জন্ম | |||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৭ জানুয়ারি ১৯৪৩ নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৮৬)||||||||||||||||||||
নাগরিকত্ব | অস্ট্রীয় সাম্রাজ্য (১০ জুলাই ১৮৫৬ – ১৮৬৭) অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি (১৮৬৭ – ৩১ অক্টোর ১৯১৮) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৩০ জুলাই ১৮৯১ – ৭ জানুয়ারি ১৯৪৩) | ||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||
স্বাক্ষর | |||||||||||||||||||||
নিকোলা টেসলা (সার্বীয়: Никола Тесла; ১০ জুলাই ১৮৫৬ - ৭ জানুয়ারি ১৯৪৩) ছিলেন একজন সার্বিয়ান-আমেরিকান[২][৩][৪][৫] উদ্ভাবক, তড়িৎ প্রকৌশলী, যন্ত্র প্রকৌশলী এবং ভবিষ্যবাদী, যিনি আধুনিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ও তারবিহীন তড়িৎ পরিবহন ব্যবস্থা আবিষ্কারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।[৬]
অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যে জন্ম ও বেড়ে ওঠা টেসলা ১৮৭০ সালে প্রকৌশল এবং পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন এবং ডিগ্রি না নিয়েই ১৮৮০ দশকের গোড়ার দিকে নতুন বৈদ্যুতিক শক্তি শিল্পের কন্টিনেন্টাল এডিসনে কাজ শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। টেসলা স্বল্প সময়ের জন্য নিউইয়র্ক শহরের এডিসন মেশিন ওয়ার্কসে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে নিজ পরিচালনায় কাজ শুরু করেন।
তার ধারণাগুলির অর্থায়ন ও বিপণনের জন্য অংশীদারদের সহায়তায় টেসলা নিউইয়র্কে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক ডিভাইস বিকাশের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে ওয়েস্টিংহাউস ইলেক্ট্রিকের লাইসেন্সযুক্ত তার আবিষ্কার বিকল্প কারেন্ট (এসি) আনয়ন মোটর এবং সম্পর্কিত পলিফেজ এসি পেটেন্টগুলি তাকে প্রচুর পরিমাণে অর্থোপার্জন করতে সাহায্য করে এবং পলিফেস সিস্টেমের ভিত্তি হয়ে ওঠে যা শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি বাজারজাত করে।
নিজের নামে পেটেন্ট ও বাজারজাত করতে, টেসলা যান্ত্রিক অসিলেটর / জেনারেটর, বৈদ্যুতিক স্রাব নল এবং শুরুর দিকের এক্স-রে ইমেজিংয় নিয়ে একাধিক গবেষণা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি প্রথম ওয়্যারলেস নিয়ন্ত্রিত নৌকাও তৈরি করেছিলেন। টেসলা একজন উদ্ভাবক হিসাবে সুপরিচিতি পেয়েছিলেন এবং তার গবেষণাগারে তারকা এবং ধনী পৃষ্ঠপোষকদের কাছে তার আবিষ্কার প্রদর্শন করতেন এবং পাবলিক বক্তিতাগুলোতে প্রদর্শনীর জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
১৮৯০ এর দশক জুড়ে, টেসলা তারহীন আলো এবং বিশ্বব্যাপী তারহীন বৈদ্যুতিক শক্তি বিতরনের ধারণা সম্ভব করতে নিউইয়র্ক এবং কলোরাডো স্প্রিংসে জুরে উচ্চ-ভোল্টেজ, উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির বৈদ্যুতিক গবেষণা করেন।
১৮৯৩ সালে, তিনি তার ডিভাইসগুলির মাধ্যমে ওয়্যারলেস যোগাযোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। টেসলা তার অসমাপ্ত ওয়্যারডেনক্লাইফ টাওয়ার প্রকল্পে, আন্তঃমহাদেশীয় ওয়্যারলেস যোগাযোগ এবং পাওয়ার ট্রান্সমিটারে তার চিন্তাগুলোকে বাস্তবে রুপান্তর করতে চেয়েছিলেন, তবে তার কাজ শেষ হবার আগেই প্রকল্পের তহবিল শেষ হয়ে যায়।
ওয়ার্ডেনক্লাইফের পরে, টেসলা ১৯১০ এবং ১৯২০ এর দশকে বিভিন্ন আবিষ্কারের জন্য একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা করেন এবং বিভিন্ন মাত্রার সাফল্য পান। তার উপার্জিত অর্থের বেশিরভাগ গবেষণা কাজে ব্যয় করে, শেষজীবনে নিউইয়র্কের বিভিন্ন হোটেলে দিনযাপন করতেন তিনি এবং মরণোত্তর তার অনেক হোটেল বিল বকেয়া ছিল। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে মারা যান।
মৃত্যুর পর টেসলার অনেক গবেষণা ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত রহস্যময়ি থেকে যায়। ১৯৬০ সালে জেনারেল কনফারেন্স অন ওয়েট এন্ড মেসারস টেসলার সম্মানে চৌম্বকীয় প্রবাহের ঘনত্বের এসআই ইউনিটটির নামকরণ টেসলা করে। ১৯৯০ এর দশক থেকে টেসলার জনপ্রিয়তা পুনরায় বাড়তে থাকে।
নিকোলা টেসলা ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই স্মিলিয়ান (বর্তমান ক্রোয়েশিয়া) নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নাম মিলুতিন টেসলা (১৮১৯–১৮৭৯) পেশায় একজন ধর্মযাজক ছিলেন, আর মা ছিলেন ডুকা টেসলা (১৮২২-১৮৯২)। ডুকা টেসলার বাবা যিনি নিজেও ধর্মযাজক ছিলেন, বাসার জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি বানাতে এবং সার্বিয়ান মহাকাব্য মুখস্থ রাখতে পারদর্শী ছিলেন।
টেসলার মা ডুকা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তবে টেসলা মনে করেন, তিনি তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি তার মায়ের কাছ থেকে বংশগতভাবে ও তার মায়ের পরিচর্যা ও প্রভাবে পেয়েছেন। টেসলার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন পশ্চিম সাইবেরিয়ান, মন্তিনিগ্রর এলাকার।
টেসলা তার বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ। তার তিন বোন মিল্কা, আঞ্জেলিনা, মারিকা আর ভাই ডানে, যিনি এক ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় মারা যায় যখন টেসলার বয়স ৫ বছর। টেসলা ১৮৬১ সালে সিমিলজানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান, যেখানে তিনি জার্মান, গণিত আর ধর্ম শেখেন। ১৮৬২ সালে তার পরিবার গোসপিক এ যায়, যেখানে তার বাবা ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করত। টেসলা তার প্রাথমিক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা শেষ করেন। ১৮৭০ সালে তিনি উত্তরের কারলোভাকে যান উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। সেখানে জার্মান ভাষায় শিক্ষা দেয়া হতো।
টেসলা পরবর্তীতে জানান তিনি একজন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপকের দ্বারা তড়িৎ প্রদর্শনীতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। টেসলা বলেন, এসব রহস্যময় ঘটনাগুলোর প্রদর্শনীই তাকে বিদুৎ এর মত এই অসাধারন শক্তি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তুলেছিল। টেসলা মনে মনে ক্যালকুলাসের যেসব সমাধান করতে পারতেন, তা দেখে তার শিক্ষকদের মনে সন্দেহ আর বিশ্ময় সৃষ্টি করেছিল। ১৮৭৩ সালে তিনি তার ৪ বছরের বিদ্যালয় মাত্র ৩ বছরে শেষ করেন।
১৮৭৪ সালে তিনি অস্ট্রিয়-হাঙ্গেরির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি শিকারি পর্বত অন্বেষণ করেন। তিনি বলতেন, প্রকৃতি তাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী করেছে। তিনি টোমিনগাজ এ থাকাকালীন অনেক বই পড়েন। পরে তিনি বলেন যে, মার্ক টোয়েন এরসাথে কাজ করায় তার প্রাথমিক অসুস্থতা দূর হয়েছিলো। ১৮৭৫ সালে নিকোলা টেসলা অস্ট্রিয়ার গারাজে সেনাবাহিনীর একটি বৃত্তি লাভ করেন।
তিনি প্রথম বছর কোন ক্লাস বাদ দেননি এবং সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ৯ টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সাইবেরিয়ান একটি সংস্কৃতি ক্লাব এ যোগদান করেন। তার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের কাছ হতে তার বাবার কাছে একটি চিঠি যায়। সেখানে লিখা ছিল, আপনার ছেলে মেধাতালিকায় প্রথম। টেসলা বলেন যে, তিনি রবিবার এবং ছুটির দিন ছাড়া অন্য সব দিন ভোর ৩ টা হতে রাত ১১ টা পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে কঠোর পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা পেতেন।
১৮৭৯ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর তার প্রফেসার এর কাছ থেকে তার বাবার চিঠি পান। সেখানে লিখা ছিল অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে টেসলা মারা যেতে পারে। যদি টেসলা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তবে তাকে যেন বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। সেই সময় ২য় বর্ষে থাকাকালীন তিনি তার শিক্ষক গ্রামে ডাইনামো দারা প্রভাবিত হন। তিনি ২য় বর্ষের পর তার বৃত্তি হারান কারণ তিনি জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ৩য় বর্ষে তিনি ভর্তি, সুবিধাসহ সকল সুবিধা হারান।এরপর তিনি সব ছেড়ে তার পরিবার এর কাছে ফিরে যান। তিনি বলেছিলেন, তার আবেগ আগে ও পরে সব সমান ছিল।
পরবর্তীতে তিনি আমারিকাতে বিলিয়ার্ড খেলায় বেশ সুনাম অর্জন করেন। যখন পরীক্ষা চলে আসে তখন তিনি পরীক্ষার জন্য তৈরি ছিলেন না। তিনি পড়ালেখা করতে অস্বীকার করেন। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বর্ষে কোন নম্বর পাননি। ১৮৭৮ সালে তিনি তার পরিবারের সাথে সব কিছু গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। এরপর তিনি মারিবর চলে যান। যেখানে তিনি মাসে মাত্র ৬০ ফ্লরিন এর জন্য কাজ করতে থাকেন। তিনি তার সময় রাস্তার মানুষের সাথে কার্ড খেলে পার করতেন। ১৮৭৯ সালে তার বাবা মালটিন মারিবর যান তাকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সেই তিনি রোগে ভুগছিলেন।
১৮৭৯ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি গোসপিক ফিরে আসেন। ১৮৭৯ সালের ১৭ এপ্রিল তার বাবা মারা যান। তখন তিনি গোসপিক বিশ্ববিদ্যালয় এর সবচাইতে বয়স্ক ছাত্র। ১৮৮০ সালে তিনি তার দুই চাচার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গোসপিক ত্যাগ করে প্রাগে আসেন পড়ালেখা করার জন্য কিন্তু তিনি অনেক দেরি করে ফেলেন। তিনি কখনও গ্রিক ভাষা শিখেননি এবং চেক ভাষাও জানতেন না। তাই এসব বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হতে কোন নম্বর পান নি।
১৮৮১ সালে টেসলা বুদাপেস্ট এর একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।তিনি বুঝতে পারেন যে তার এই কোম্পানি নির্মাণাধীন, তাই তিনি কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তার কোম্পানি বুদাপেস্ট এর অন্যতম কোম্পানিতে পরিণত হন এবং তিনি ছিলেন তার প্রধান ইলেক্ট্রিশিয়ান। তিনি সেখানে চাকরি করার সময় কোম্পানির যে উন্নতি হয় তা পরবর্তীতে আর কেউ করতে পারে নি।
১৮৮২ সালে ফ্রান্সে তিনি এডিসন এর কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি এডিসনের নিউইয়র্কের কোম্পানিতে যন্ত্রের কাজে আসেন। তিনি তার প্রাথমিক জীবন তড়িৎ প্রকৌশল হিসাবে শুরু করেন এবং দ্রুত অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করেন[৭][৮]।এডিসন এর কোম্পানি থেকে তাকে সরাসরি তড়িৎ জেনারেটরের ডিজাইন বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। ১৮৮৫ সালে তিনি দাবি করেন যে তিনি এডিসন এর কোম্পানির অপর্যাপ্ত মোটর, জেনারেটর এর ডিজাইন করে উন্নত করতে পারবেন যা আর্থিক এবং ব্যবসায়িক উভয় দিক থেকে লাভবান হবে।
এডিসন তখন তাকে বলেন যে, যদি তুমি তা করতে পার তাহলে ৫০,০০০ ডলার দেব তোমাকে। তিনি তার কাজ শেষ করেন এবং তার টাকা চান। কিন্তু এডিসন তার জবাবে বলেন যে, তিনি মজা করেছিলেন আর টেসলা আমেরিকার রসিকতা বুঝতে পারে নি।পরবর্তীতে, এডিসন টেসলার জন্য সপ্তাহে ১০ ডলার থেকে ১৮ ডলার করে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। কিন্তু টেসলা তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পদত্যাগ করেন।
টেসলা এডিসন এর কোম্পানি ছাড়ার পর ১৮৮৬ সালে দুজন ব্যবসায়ির সাথে যোগ দেন। তারা হলেন রবার্ট লেন এবং বেঞ্জামিন ডালে। যারা তার তড়িৎ বাল্ব ও কারখানার জন্য আর্থিক সাহায্য করতে সম্মত হয়। আলোর ব্যবহার এর ডিজাইন এর উপর ভিত্তি করে নিকোলা টেসলা প্রথম তড়িৎ বাতি তৈরি করেন এবং তিনি ডাইনামিক যন্ত্রের ডিজাইন করেছিলেন যা ছিল আমেরিকার প্রথম ডিজাইন।
কিন্তু বিনিয়োগকারীরা নিকোলা টেসলার নতুন ধরনের মোটর এবং বাতির প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় নি। তারা মনে করেছিল যে, তড়িৎ উন্নয়নের চাইতে অন্য কিছু উন্নত করলে ভাল হবে। তারা টেসলাকে টাকা-পয়সা ছাড়াই কোম্পানি থেকে বের করে দিতে চান। টেসলা তার প্রায় সকল ক্ষমতাই হারাতে থাকেন কোম্পানি থেকে। এমন কি তড়িৎ মেরামত এর কাজ মাত্র ২ ডলার এর বিনিময়ে করেন। ১৮৮৬ - ১৮৮৭ সালের শীতের সময় টেসলা মাথা এবং চোখ এর সমস্যার জন্য অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন।
১৮৮৬ সালের শেষের দিকে টেসলা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর নিয়ন্ত্রক আলফ্রেড ব্রাউন এবং নিউইয়র্কের এটর্নি চার্লস এফ পিক এর সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের দুইজনের কোম্পানি চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল এবং আর্থিক সাহায্য করার জন্য তৈরি ছিল। তারা টেসলার কথা শুনে তাকে সাহায্য করতে সম্মত হয়। ১৮৮৭ সালে তারা টেসলার কোম্পানির সাথে একটি চুক্তি করেন। সে অনুযায়ী, ১/৩ অংশ হবে টেসলার, ১/৩ অংশ হবে পিক এবং ব্রাউনের এবং ১/৩ অংশ হবে প্রকল্প উন্নয়নের। তারা একটি গবেষণাগার তৈরি করেন টেসলার জন্য ৮৯ লিফটি রোড, মান্থানে। সেখানে তিনি নতুন ধরনের মোটর জেনারেটর এবং যন্ত্রপাতি উন্নয়নের কাজ করতেন। ১৮৮৭ সালে একটি জিনিসের বেশ উন্নয়ন করেন তা হল তড়িৎ আবেশ মোটর। যা পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ এর সাহায্যে দ্রুত চলে। তিনি শক্তির একটি নিয়মে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে শুরু করেছিলেন যা বিশাল দূরত্বে ভোল্টেজ এর ট্রান্সমিশন এর জন্য উপকারী ছিল।
মোটরে অনেকগুলো তড়িৎ পর্যায় ছিল যা মোটর ঘোরার সময় একটি বৃত্তাকার চুম্বক ক্ষেত্রের তৈরি করতে পারে। আর তাই তড়িৎ মোটরে ১৮৮৮ সালে একটা নতুন ডিজাইন দেয়া হয় যেখানে তড়িৎ প্রবাহের যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না এবং উচ্চ বিস্ফোরণ-রোধক ক্ষমতা সম্পন্ন যান্ত্রিক বাল্ব এর প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৮৮৮ সালে টেসলার পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ মোটর এবং আবেশ মোটর এর ঘটনা ইলেকট্রিক ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটন হাউজ এর তড়িৎ প্রকৌশলীরা জর্জ ওয়াশিংটনকে বলেন যে, টেসলা যে এসি মোটর ও শক্তি ব্যবহার করেন তা ওয়াশিংটন হাউজের জন্য প্রয়োজনীয়। ওয়াশিংটন হাউজ তখন ১৮৮৮ সালে ইতালির পদার্থবিদ গ্যালিলিও এর সাথে তার সাদৃশ্য দেখেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে টেসলার।
১৮৮৮ সালে ব্রাউন এবং পিক জর্জ ওয়াশিংটন এর কাছ থেকে টেসলার তড়িৎ মোটর এর পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ এর ডিজাইন এর জন্য নগদ ৬০,০০০ ডলার এবং প্রতি এসি হর্স শক্তির জন্য আড়াই ডলার চুক্তি করে সমঝোতা করেন। ওয়াশিংটন ১ বছরের জন্য লোনে ২,০০০ ডলার (বর্তমানে ৫২,৫০০ ডলার) খরচে প্রতিমাসে তড়িৎ কারখানায় নিয়ে আসেন। সেই বছর টেসলা পিটার্সবার্গে কাজ করেন এবং রাস্তায় গাড়ির শক্তি ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ তৈরি করেন। তিনি ওয়াশিংটন হাউজের অন্যান্য প্রকৌশলীদের মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ উদ্ভাবন করেন। সেখানে তিনি প্রস্তাব দেন যে, তারা সেখানে ৬০ চক্রে তড়িৎ দিতে পারেন কিন্তু তা রাস্তার গাড়িতে কাজ করবে না।তারা এসি মোটরের ব্যবহার বাড়িয়ে ডিসি মোটরের ব্যবহার কমায়।
টেসলার পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ এর উপর কাজকে অনেকে তড়িৎ যুদ্ধ বলে। যা মূলত টমাস এডিসন এবং জর্জ ওয়াশিংটন এর মধ্যে চলত। টেসলার বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ওয়াশিংটন হাউজের অনেক উন্নতি হয় এবং ওয়াশিংটন হাউজের এসি মোটর তৈরি হয় এডিসন এর ডিসি মোটরের সাথে সাথেই। ১৮৯৩ সালে জর্জ ওয়াশিংটন হাউজ, শিকাগোতে ওয়ার্ল্ড কলম্বিয়ান প্রতিযোগিতায় এসি মোটরের কারণে জয়ী হন। তার প্রতিপক্ষ এডিসন এর ডিসি মোটরকে তিনি পরাজিত করেন সেই ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে। এটা ছিল পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ শক্তির সূচনার ইতিহাস। যা ওয়াশিংটন হাউজ নিরাপদে এবং শান্তভাবে আমেরিকান জনগণ এর মাঝে এনেছিলেন। এই কলম্বিয়ান প্রদর্শনীতে টেসলা ইউরোপ এবং আমেরিকার তড়িৎ এর পার্থক্য তুলে ধরেন।
তিনি উচ্চ ভোল্টেজে, উচ্চ স্পন্দন এবং পরযায়ক্রমিক তড়িৎ এর তারবিহীন বাতি প্রদর্শন করেন। টিনের পাত দিয়ে দুটি কঠিন রাবারের প্লেটের ঘরের মধ্যে স্থাপিত করা হয়। এটার দূরত্ব ছিল প্রায়ই ১৫ ফুট এবং ট্রান্সফরমার থেকে তারের মাধ্যমে টার্মিনালে তড়িৎ প্রবাহ ছিল। যখন তড়িৎ প্রবাহ শুরু হত, টিউব বাতি যেগুলো তারের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল না কিন্তু পর্যায়ক্রমে এর মাঝে ছিল সেগুলো জ্বলে উঠত। এটি টেসলার ২ বছর আগে লন্ডনে করা পরীক্ষার মতন ছিল। সেখানে তারা এর ফলাফল দেখে আশ্চর্য হয়েছিল।
টেসলা চুম্বক ক্ষেত্রের ঘূর্ণনের নীতি ব্যাখ্যা করেন এবং কীভাবে কপার এগ কাজ করে আবেশ মোটর দ্বারা তার ব্যাখ্যা দেন। এই যন্ত্রটি কলম্বাস এগ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯২ সালে এডিসন এর কোম্পানি শক্তিশালী হতে থাকে জে পি মরগানকে দ্বারা এবং এর ফলে ওয়াশিংটন হাউজের সাথে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধের সৃষ্টি হয়। ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এটি মাত্র এই দুটি কোম্পানির মধ্যে ছিল কিন্তু এর পর থেকে ওয়াশিংটন হাউজ টাকার যুদ্ধ শুরু করেন। তখন নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটন হাউজ টেসলাকে তার এসি মোটর প্রকল্প দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
কিন্তু টেসলা বলেন যে এভাবে চলতে থাকে তিনি ওয়াশিংটন হাউজ এর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। ওয়াশিংটন হাউজ টেসলাকে ২,১৬,০০০ ডলারের বিনিময়ে পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ প্রকল্পের সাথে অনুমতির পরিবর্তন করতে চান। এতে করে পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ জনপ্রিয়তা অনেক বাড়তে থাকে। প্রতি হর্স পাওয়ার এর জন্য আড়াই ডলার ঘোষণা করা হয়।
১৮৯১ সালের ৩০ জুলাই, ৩৫ বছর বয়সে টেসলা আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি দক্ষিণের ৫ম এভেনিউতে একটি গবেষণাগার তৈরি করেন এবং পরে ৪৬ই হাউজটন রোড, নিউইয়র্কে। তিনি তারবিহীন শক্তিশালী ট্রান্সমিশন বসান এবং তারের মাধ্যমে উভয় জায়গাতে বাতি বসান। একই বছর তিনি টেসলা কয়েল উদ্ভাবন করেন। তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহকারী প্রধান হন (১৮৯২-১৮৯৪) পর্যন্ত। যা আধুনিক (আই ইইই) ইনস্টিটিউট অব রেডিও ইঞ্জিনিয়ারস নামে পরিচিত।
এই পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৮৯৪ সাল থেকে। তিনি তার গবেষণাগারে পূর্ববর্তী নষ্ট ফিল্ম এর মধ্যে দেখেন এবং সেখানে তিনি অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রদীপ্ত রশ্মি দেখতে পান। (পরে তা রঞ্জন রশ্মি বা এক্সরে রশ্মি নামে ) পরিচিত হয়। তার প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো ছিল ক্রুক এর টিউব এবং ঠাণ্ডা ক্যাথোডের বিচ্ছিন্ন তড়িৎ এর সাথে। কিছুদিনের মধ্যেই টেসলার সকল গবেষণা, মডেল, ডাটা ছবিসহ ৫০,০০০ ডলারের জিনিস ৫ম এভেনিউর গবেষণাগার থেকে হারিয়ে যায়।
১৮৯৫ সালের মার্চে দ্যা নিউইয়র্ক টাইমে নিকোলা টেসলা বলেন যে, আমি খুব দুঃখিত। আমি কি করতে পারি। তিনি মার্ক টোয়েন এর সাথে টিউব নিয়ে কাজ করার সময় একই বছরের ডিসেম্বর মাসে এক্সরের ছবি তুলেন। ক্যামেরার লেন্সের একমাত্র জিনিস যা বুঝা গিয়েছিল তা হল স্ক্রু। ১৮৯৬ সালের মার্চ মাসে উইলহম রন্তেজন এক্সরে এবং এক্সরের ছবি আবিষ্কার করেন।
টেসলা গবেষণা এক্সরে, এক্সরের ছবি এবং উচ্চ শক্তি নিয়ে করতে থাকেন। তিনি নিজে এর ডিজাইন করেন যার আউটপুট হিসাব টেসলা কয়েল। তার গবেষণাতে তিনি এক্সরে রশ্মি, বর্তনী তৈরি করেন এবং তার যন্ত্রপাতি দ্বারা রন্তেজেনের চাইতে শক্তিশালী এক্সরে রশ্মি এবং ছবি বানান। টেসলা একসাথে এক্সরে রশ্মি, বর্তনী নিয়ে কাজ করার সময় একটি বিপদজনক জিনিস লক্ষ্য করেন। তিনি তার প্রথম যেসব অজানা পরীক্ষা করেছিলেন, তিনি চামড়ার ক্ষতি হবার কথা বলেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন চামড়ার ক্ষতি এক্সরে রশ্মির জন্য নয়, কিন্তু ওজন চামড়ার উপর প্রভাব ফেলে এবং নাইট্রাস এসিড ক্ষুদ্র প্রভাব ফেলে। টেসলা ভুলবশত বিশ্বাস করেছিল যে, রঞ্জন রশ্মি অনুদৈর্ঘ্য রশ্মি। যদিও সেটা ছিল প্লাসমা দৈর্ঘ্য। এই প্লাসমা দৈর্ঘ্য চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে ঘটে থাকে। ১৯৩৪ সালের ১১ জুলাই নিউইয়র্ক হিরালড টারবাইন এ টেসলার একটি অনুচ্ছেদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি পুনরায় বলেন যে, পরীক্ষা যখন একটি মাত্র শূন্য ইলেক্ট্রোড এর মধ্যে হয়, তখন একটি অংশ ক্যাথোডে ভেঙে যেতে পারে, টিউবকে অতিক্রম করতে পারে এবং ভৌতভাবে আঘাত করতে পারে। তিনি অনুভব করেন যে, এটি দেহের মধ্যে দিয়ে যেভাবে প্রবেশ করে ঠিক সেই পথ দিয়েই বের হতে পারে। এটিকে তড়িৎ বন্দুক বলে। এটি ধাতব কামড় নামেও পরিচিত।এই কণাগুলোর বল একসাথে ভ্রমণ করবে।
রেডিও তরঙ্গ দ্বারা সংক্রমন এর সম্ভাবনা বিষয়ক টেসলার তত্ত্ব নিয়ে ১৮৯৩ সালে সেন্ট লুইসে, মিসরিতে ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট এ আলোচনা করা হয়। টেসলার গবেষণা এবং নীতি অনেক কিছুই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রেডিওর উন্নতিতে ব্যবহা্রকৃত অনেক যন্ত্রপাতি যেমন টেসলা কয়েল ব্যবহার করা হয়। ১৮৯৬ সালে রেডিওর তরঙ্গের পরীক্ষা করা হয়েছিল গালবার হোটেলে যেখানে তিনি থাকতেন। ১৮৯৮ সালে তিনি একটি রেডিও নিয়ন্ত্রণকারী নৌকা তৈরি করেন যা টেলিযোগাযোগের কাজে লাগে এবং এটি মাদিসন স্কয়ারে গার্ডেন তড়িৎ প্রদর্শনীতে করা হয়। তিনি এর কাযকারিতা ব্যাখ্যা করেন যা একধরনের যাদু এবং একটি প্রশিক্ষিত বানর দারা নিয়ন্ত্রিত ছিল।
টেসলা তার রেডিও সম্পর্কিত সকল মতবাদ, চিন্তাভাবনা আমেরিকান সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল কিন্তু আমেরিকান সেনাবাহিনী সেখানে কোন আগ্রহ দেখায় নি। প্রথম বিশযুদ্ধ পর্যন্ত রেডিও বেশ প্রয়োজনীয় যন্ত্র ছিল এবং পরে তা অনেক দেশের সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৩ মে টেসলা যখন শিকাগোতে ভ্রমণ করছিলেন তখন তিনি একটি বাণিজ্যিক ক্লাবকে স্বয়ংক্রিয় টেলিযোগাযোগ এর সুবিধা দেখিয়েছিলেন।
১৯০০ সালে তিনি ট্রান্সমিটিং তড়িৎশক্তি এবং তড়িৎ ট্রান্সমিটার এর অনুমোদন লাভ করেন। যখন মার্কনি ১৯০১ সালে প্রথম রেডিও সম্প্রচার করে। তিনি দাবি করেন এটি তার সহযোগিতায় করা হয়েছে। এটি ছিল রেডিও আবিষ্কারের মুহূর্তে বিভিন্ন ধারণা এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে যুদ্ধে। ১৯৪৩ সালে আদালত রায় দেয় যে, মার্কনির যুক্তি গ্রহণযোগ্য এবং সব ধারণা একই ছিল না।
১৮৯৯ সালের ১৭ মে টেসলা কলোরাডোতে চলে আসেন সেখানে তিনি উচ্চ ভোল্টেজ ও উচ্চ স্পন্দন এর পরিক্ষা করেন।তার গবেষণার ছিল ফুতাডে এবং কিওলার কাছে।তিনি এই জায়গাটি পছন্দ করেছিলেন কারণ সেখানে পর্যায়ক্রমিক তড়িৎ শক্তির বণ্টনের ধাপগুলোর কাজ করা সহজ ছিল এবং সেখানে কাজের জন্য অতিরিক্ত কোন টাকা দিতে হত না।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তারবিহীন টেলিযোগাযোগ এর পরীক্ষা করছেন যার সংকেত প্যারিসের পিকের চূড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়।
১৮৯৯ সালের ১৫ জুনে তিনি কলোরাডো স্প্রিং এর পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি প্রাথমিক আগুনের স্ফুলিঙ্গ ৫ ইঞ্চি পরিমাপ করেন এবং এটি খুব পুরু , গোলমালপূর্ণ শব্দ ছিল। টেসলা বায়ুমণ্ডলীয় তড়িৎ এর অনুসন্ধান করেন। তার গ্রাহক যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি আলোর সংকেত পর্যবেক্ষণ করেন।তিনি স্থির তরঙ্গও প্রথম লক্ষ্য করেন।বিশাল দূরত্ব এবং প্রকৃতিতে আলোর ঝলকানি দেখে টেসলা বলেন যে, পৃথিবীর প্রতিধ্বনি স্পন্দন রয়েছে।
তিনি কৃএিম বজ্রপাত তৈরি করেছিলেন (চার্জবিহীন এবং মিলিয়ন ভোল্ট,১৩৫ ফুট উপরে)।তাই বজ্রপাতের শব্দ ১৫ মাইল দূরে ক্রিপল কিক কলোরাডোতে ও শোনা যায়।মানুষ রাস্তায় হাটার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখেছিল। এই স্ফুলিঙ্গ যখন পানির পাইপে প্রবেশ করেছিল তখন থেকে কিছু কমে যেতে থাকে।সুইচ বন্ধ করার পরেও সেখানকার বাতিগুলো জ্বলছিল।মানুষ তাদের ধাতুর জুতার মধ্যে শক পাওয়ার পায় এবং স্থিতিশীল হয়ে পরে।সেখানকার প্রজাপতিগুলোর মধ্যেও তড়িৎ প্রবাহ শুরু হয় এবং পাখায় আগুন ধরে যায়।
পরিখা চলাকালীন তিনি কিছু ভুল করেন যার ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়।১৯১৭ সালের অগাস্ট মাসে তিনিএর কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন যে,সেখানে ১০০ কিলোওয়াট শক্তির উচ্চ স্পন্দন তৈরি হয় যার ফলে ৬ মাইল দূরে একটি বাসায় আগুন ধরে যায়।এর ফলে আর উচ্চ স্পন্দন এর সৃষ্টি হয় তড়িৎ উৎপাদন করে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। তিনি তার গবেষণাগারে কাজ করার সময় মাঝে মাঝে শব্দ পেতেন যা তিনি ধারণা করতেন অন্ন কোন গ্রহ থেকে আসছে। ১৮৯৯ সালে তিনি এসব উল্লেখ করে একটি চিঠি জুলিয়ান হাওতনের কাছে পাঠান।
১৯০০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি আরও একটি গবেষণার তথ্য নিয়ে একটি চিঠি রেড ক্রস সোসাইটিতে পাঠান।তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।সাংবাদিকগণ তার কথা শুনে বলেছিল যে,এটি মঙ্গল গ্রহ থেকে আসতে পারে।১৯০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলিকার সাপ্তাহিক অনুছেদ টকিং উইথ প্ল্যানেট এ তিনি বলেন যে, তিনি ধিরে শান্তভাবে একটি শব্দ পেয়েছেন যা মঙ্গল,বুধ অথবা ভেনাস থেকে আসতে পারে।
এরপর সবাই একটি সিধান্তে আসে যে, ১৮৯৯ সালে মার্কনি ইউরোপীয় গবেষণায় (এস-------)কিছু শব্দ পেয়েছিল যা কলোরাডো গবেষণার তারহীন মাধ্যমে আবারও পাওয়া যায়। ১৮৯৯ সালে জন জেকব এস্তর এই পরীক্ষার উন্নতি এবং উদ্ভাবনের জন্য তাকে ১০০০,০০০ ডলার দেন।তিনি সব টাকা এই প্রকল্পে ব্যবহার করেন। ১৯০০ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি কলোরাডো স্প্রিং গবেষণা বাদ দেন। ১৯০৪ সালে তার গবেষণাগার নষ্ট হয়ে যায় এবং ২ বছর পর বিক্রি করে দেয়া হয়। তিনি কলোরাডো স্প্রিং তৈরি করেছিলেন তারবিহীন টেলিযোগাযোগ মাধ্যমে যা ওয়েরডেন ক্লিফ নামে পরিচিত।
১৯০০ সালে ১,৫০,০০০( বর্তমানে ৪২,৫২,২০০ ডলার) ডলার (৫১ ভাগ মরগান হতে) নিয়ে তিনি তার ওয়েরডেন ক্লিফ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তিনি পরে মরগানকে আরও টাকা দেবার জন্য বলেন যাতে সেখানে আরও শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা যায়। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় এত টাকা কথায় গেল জবাবে তিনি বলেন ১৯০১ সালে তিনি অনেক ঝামেলার শিকার হন যার কারণ ছিল মরগান। মরগান তার কথা শুনে অবাক হন এবং শেয়ার বাজার ধ্বংসের কথা শূনে বিস্মিত হন। তখন তিনি পুনরায় প্রকল্প শুরু করার জন্য মরগানের কাছ থেকে টাকা চান কিন্তু যা ছিল ফলহীন।
১৯০১ সালে মার্কনি সফলভাবে এস অক্ষরটি ইংল্যান্ড হতে নিউ ফাউন্ডেশন এ প্রেরণ করেন যাতে করে তার সাথে মরগানের সম্পর্ক প্রায় শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী ৫ বছর তিনি ৫০ এর অধিক চিঠি মরগানকে পাঠান এবং ওয়েরডেন ক্লিফ প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য সাহায্য চান। তিনি নিজেই প্রথম ৯মাস কাজ চালিয়ে যান। এই ভবনটি ছিল খাড়া ১৮৭ ফিট (৫৭ মিটার)।
১৯০৩ সালের জুলাই মাসে তিনি পুনরায় মরগান এর কাছে চিঠি লিখেন যে তারবিহীন যোগাযোগ মাধ্যমের কাজ করতে হলে ওয়েরডেন ক্লিফ প্রকল্পের কাজ করতে হবে। ১৯০৪ সালের ১৪ অক্টোবর মরগান অবশেষে তাকে উত্তর দেন। মরগানের চিঠিতে লিখা ছিল, আমার পক্ষে এসব করা অসম্ভব।পরে আবারও টাকার জন্য তিনি মরগানকে চিঠি লিখেন। ১৯০২ সালে তিনি তার গবেষণাগার হাউজটন থেকে ওয়েরডেন ক্লিফ এ নিয়ে আসেন।
১৯০৬ সালের ৫০তম জন্মবার্ষিকীতে তিনি তার ২০০ হর্স পাওয়ার (১৫০ কিলোওয়াট )১৬০০০ রেম্প ধারবিহিন টারবাইন (১০০-৫০০০ এইচ পি)ক্ষমতার ইঞ্জিন পরীক্ষা করেন। তিনি স্টিম ইঞ্জিন শক্তির যান্ত্রিক দোলক তৈরি করেন।যা টেসলার দোলক নামে পরিচিত।হাউজটন গবেষণাগারে কাজ করার সময় তিনি যান্ত্রিক দোলক তৈরি করেন।যত বেশি গতি বৃদ্ধি পায়,তা যান্ত্রিক দোলকের স্পন্দনের সেই অনুনাদ এর জন্য ক্ষতি হয়।
তিনি হাতুরি বিশেষ টারবাইনের ব্যবহারর চেষ্টা করেন কিন্তু এর মধ্যে পুলিশ এসে যায়।১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিকোলা টেসলা ড্রিম নামে ওয়ার্ল্ড টুডে পত্রিকায় এলান বেন্সন একটি অনুছেদ প্রকাশ করেন। সেখানে বেন্সন তার সম্পর্কে দেখান যে, নিকোলা টেসলা দাবি করে যে তিনি পৃথিবীর কঠিন স্তরের স্পন্দন বের করতে পারবেন যা পৃথিবীর সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।এই প্রকিয়া নিয়মিত করলে হয়ত পৃথিবীকে দুই ভাগে ভাগ করা যাবে।
টেসলার তড়িৎ তত্ত্ব যা মস্তিস্কের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।১৯১২ সালে তিনি দেখান যে,তড়িৎ এর অসাবধানতার জন্য একজন মেধাবী ছাত্র নিস্তেজ হয়ে যায়। তিনি বলেন কোন বিদ্যালয়ের দেয়ালের তার এবং উচ্চ তড়িৎ এর তরঙ্গ একসাথে তড়িৎ এর ক্ষেত্রে পরিনত হবে।এটি নিউইয়র্কের সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম মাক্সয়েল দারা প্রমাণিত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হবার পূর্বে তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাহায্য চেয়েছিলেন।যুদ্ধ শুরু হবার পর যেসব ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকে সাহায্য পেতেন তা বন্ধ হয়ে যায়।এমনকি তিনি তার ওয়েরডেন ক্লিফ বিক্রি করে দেন ২০,০০০ ডলার (বর্তমানে ৪৭০,৯০০ ডলার)।১৯১৭ সালে ওয়েরডেন ক্লিফ ধ্বংস করা হয়েছিল।কারণ গুরুত্বপূর্ণ রিয়েলস্টেটের ব্যবসার জন্য।তিনি তখন এ আই ইই থেকে সর্বোচ্চ সম্মান এডিসন পদক গ্রহণ করেন।
১৯১৭ সালের অগাস্ট মাসে ইলেকট্রিক এক্সপেরিমেন্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় যে,তড়িৎ সাব মেরিনে তড়িৎ রশ্মি স্পন্দন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।তিনি তার ধারণা কিছুটা ভুল করেছিলেন। উচ্চ স্পন্দন এর রেডিও দৈর্ঘ্য হবে পানির মধ্যে দিয়ে।কিন্তু এমিলে গিরাও যিনি প্রথম ১৯৩০ সালে ফ্রান্সের রাডার এর নিয়ম উন্নত করেন সেই গিরাও ১৯৫৩ সালে বলেন যে টেসলার সাধারণ কল্পনা যা ছিল তা খুব উচ্চ স্পন্দন এর সংকেতের জন্য দরকার ছিল।যা ছিল টেসলার সপ্ন এবং যা টেসলা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যান কিন্তু যদিও সেটা সপ্ন তবুও কিছুটা সত্য হয়।
Serbian-American engineer and physicist Nikola Tesla (1856–1943) made dozens of breakthroughs in the production, transmission and application of electric power.