দ্বিতীয় ফয়সাল فيصل الثاني | |||||
---|---|---|---|---|---|
ইরাকের বাদশাহ | |||||
রাজত্ব | ৪ এপ্রিল ১৯৩৯ – ১৪ জুলাই ১৯৫৮ | ||||
দায়িত্বগ্রহণ | ২ জুন ১৯৫৩ | ||||
পূর্বসূরি | গাজি | ||||
উত্তরসূরি | রাজতন্ত্র বিলুপ্ত | ||||
রাজপ্রতিভূ | আবদুল্লাহ বিন আলি | ||||
প্রধানমন্ত্রী |
| ||||
জন্ম | বাগদাদ, ইরাক রাজতন্ত্র | ২ মে ১৯৩৫||||
মৃত্যু | ১৪ জুলাই ১৯৫৮ বাগদাদ, আরব ফেডারেশন | (বয়স ২৩)||||
সমাধি | রাজকীয় কবরস্থান, আজামিয়াহ | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | অবিবাহিত | ||||
| |||||
রাজবংশ | আল-হাশিম | ||||
পিতা | গাজি | ||||
মাতা | আলিয়া বিনতে আলি | ||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি)[১] |
দ্বিতীয় ফয়সাল (আরবি : الملك فيصل الثاني Al-Malik Fayṣal Ath-thānī) (২রা মে ১৯৩৫ – ১৪ই জুলাই ১৯৫৮) ছিলেন ইরাকের শেষ বাদশাহ। ১৯৩৯ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ১৯৫৮ সালের জুলাইয়ে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি শাসন করেন। ১৪ জুলাই বিপ্লবে তিনি তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সাথে নিহত হন। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ইরাকে ৩৭ বছরব্যপী চলমান হাশেমি রাজত্বের অবসান ঘটে। এরপর কোনোপ্রকার গণভোট ছাড়াই ইরাককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।
দ্বিতীয় ফয়সাল ইরাকের দ্বিতীয় বাদশাহ গাজি ও তার স্ত্রী আলিয়া বিনতে আলির একমাত্র পুত্র ছিলেন। তার বাবা একটি রহস্যজনক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। এসময় ফয়সালের বয়স ছিল ৩ বছর। তার মামা আবদুল্লাহ বিন আলি এসময় তার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে দায়িত্ব বুঝে নেন।
বেলজিয়ামের কমিক লেখক হার্জ তার টিনটিন কমিকসে খেমেদের যুবরাজ আবদুল্লাহকে চিত্রায়িত করতে ফয়সালকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করেন।[২] তিনি অ্যাজমার রোগী ছিলেন।[৩]
তার রাজত্বকাল ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমসাময়িক ছিল। এই যুদ্ধে ইরাক ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও মিত্রশক্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৪১ সালের এপ্রিলে তার মামা আবদুল্লাহ বিন আলি একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সাময়িকভাবে ক্ষমতাচ্যুত। অভ্যুত্থানকারীরা ইরাকের সাথে অক্ষশক্তির জোটের পক্ষে ছিল। এই অভ্যুত্থান খুব দ্রুত ইঙ্গ-ইরাকি যুদ্ধের দিকে মোড় নেয়। প্রতিশ্রুত জার্মান সাহায্য কখনোই আসেনি। জর্ডানি আরব লিজিওন এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্স ও অন্যান্য ব্রিটিশ ইউনিটের সহযোগীতায় আবদুল্লাহ পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। ব্রিটেনের সাথে ইরাকের পুনরায় মিত্রতা স্থাপিত হয় এবং ইরাক জাতিসংঘে যোগ দেয়।
তার বাল্যকালে ফয়সাল অন্যান্য বেশ কিছু ইরাকি বালকের সাথে রাজপ্রাসাদে শিক্ষালাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি স্বল্পকালের জন্য তার মায়ের সাথে যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারে অবস্থিত উইঙ্কফিল্ডের গ্রুভ লজে অবস্থান করেন। কিশোর অবস্থায় তিনি তার চাচাত ভাই হুসাইনের সাথে হেরো স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। নিজেদের রাজত্বকে একীভূত করার পরিকল্পনা তারা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
১৯৫২ সালে ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান, ডিন এচসন, অভিনেতা জেমস মেসন ও জেকি রবিনসনসহ আরো অনেকের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
ফয়সালের অভিভাবক আবদুল্লাহ বিন আলি কর্তৃক ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তি (এটি পরবর্তীতে তিনি সমর্থন করেন) ও ১৯৫৫ সালের বাগদাদ চুক্তি মতে ব্রিটেনকে ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ অব্যাহত রাখা ফয়সালের মৃত্যু ত্বরাণ্বিত হওয়ার কারণ। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জন অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে কয়েকশ প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয় এবং ইরাকি রাজপরিবারের প্রতি আনুগত্য কমে আসতে শুরু করে।
১৯৫৩ সালের ২ মে ফয়সাল সরাসরি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এসময় তিনি স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিলেন। প্যান-আরব জাতীয়তাবাদের কারণে ইরাকি রাজনীতি ও সামাজিক পরিবেশ পাল্টে গিয়েছিল।
ফয়সাল প্রথমদিকে তার মামা আবদুল্লাহ বিন আলি ও কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল নুরি আস-সাইদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। ১৯৫০ এর দশকে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তিনি ও তার উপদেষ্টারা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পদ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। অনেকের মতে এটি দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যবিত্ত ও কৃষক সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ইরাকি কমিউনিস্ট পার্টি এসময় তার প্রভাব বৃদ্ধি করে। রাজত্ব নিরাপদ থাকলেও ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। রাজনৈতিক অভিজাত, ভূস্বামী ও শাসকশ্রেণীর সমর্থক এবং শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যকার দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এর ফলে ফয়সালের সরকার বিরোধিতা তীব্র হয়ে উঠে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর লোকেরা সংসদ নিয়ন্ত্রণ করতেন বিধায় সংস্কারবাদীরা বিপ্লবকে অবস্থা পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হিসেবে ধরে নেয়। ১৯৫২ সালে জামাল আব্দেল নাসের কর্তৃক মিশরে বিপ্লবের ফলে ইরাকে একই রকম পদক্ষেপ নিতে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়।
১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী সিরিয়া নাসেরের মিশরের সাথে যুক্ত হয় ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক গঠন করে। এর ফলে ইরাক ও জর্ডানের হাশেমি রাজতন্ত্রের মধ্যে একই ধরনের জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। দুই সপ্তাহ পর ১৪ ফেব্রুয়ারি আরব ফেডারেশন অব ইরাক এন্ড জর্ডান গঠিত হয়। ফয়সাল হাশেমি পরিবারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আসীন হন।
১৯৫৬ সালে নাজাফ ও হাভিতে অভ্যুত্থানের ফলে ফয়সালের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইসরায়েল কর্তৃক মিশরে হামলা বাগদাদ চুক্তি সেইসাথে ফয়সালের শাসনের উপর জনগণকে ক্রুদ্ধ করে তোলে। বিরোধীরা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রী, স্বতন্ত্র, কমিউনিস্ট ও বাথ পার্টিকে একসাথে নিয়ে “ফ্রন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিয়ন” প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইরাকি অফিসারদের মধ্যে “সুপ্রিম কমিটি অব ফ্রি অফিসার” গঠিত হয়। ফয়সালের সরকার সুযোগ সুবিধা দানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর আনুগত্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু এই প্রচেষ্টা অকার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়। আরো অধিক সংখ্যক অফিসার রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে।
১৯৫৮ সালের গ্রীষ্মে বাদশাহ হুসাইন লেবানন সংকট সমাধানের জন্য ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা চান। আবদুল করিম কাসিমের নেতৃতাধীন জর্ডানগামী ইরাকি সেনাদল বাগদাদের দিকে অগ্রসর হয়। ১৪ জুলাই তারা অভ্যুত্থান সংঘটিত করেন। এসময় ফয়সাল রাজকীয় রক্ষীদেরকে প্রতিরোধ করতে নিষেধ করেন এবং বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সকাল ৮ টার দিকে ক্যাপ্টেন আবদুল সাত্তার সাবা আল-ইবুসি বিপ্লবীদেরকে প্রাসাদের দিকে পরিচালিত করেন। বাদশাহ, যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আলি, প্রিন্সেস হায়াম (আবদুল্লাহর স্ত্রী), প্রিন্সেস নাফিসা (আবদুল্লাহর মা), প্রিন্সেস আবাদিয়া (আবদুল্লাহর আত্মীয়) ও কয়েকজন চাকরকে প্রাসাদের চত্বরে জড়ো হওয়ার আদেশ দেন। তাদেরকে দেয়ালের দিকে ফিরে দাঁড় করিয়ে মেশিনগান দ্বারা গুলি করা হয়। গুলিতে ফয়সাল নিহত হননি। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হলে পথিমধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রিন্সেস হায়াম আহত অবস্থায় বেঁচে যান এবং দেশ থেকে পালাতে সক্ষম হন।
ফয়সালের প্রধানমন্ত্রী নুরি আস-সাইদ একই দিনে কাসিমের সমর্থকদের হাতে নিহত হন। জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়। ইরাকি তিনটি প্রধান জাতিগত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত “সার্বভৌমত্ব” পরিষদের কাছে ক্ষ্মতা হস্তান্তর করা হয়। দেশে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ১৯৬৮ সালে বাথ পার্টির জয়ের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এর পথ ধরে পরবর্তীতে সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতায় আসেন।
১৯৫৮ সালের জানুয়ারিতে ইরাকের সর্বশেষ মামলুক রাজবংশের বংশধর প্রিন্সেস কিমেত হানিমের সাথে ফয়সালের বাগদান হয়। তার তিনমাস পর এই বাগদান ভেঙ্গে যায়।
এরপর ফয়সাল ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির কন্যা শাহনাজ পাহলভিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শাহনাজ পাহলভি এতে অনিচ্ছুক ছিলেন। মৃত্যুর সময় বাদশাহ ফয়সাল প্রিন্সেস সাবিহা ফাজিলা হানিম সুলতানের সাথে বাগদানে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন মিশরের প্রিন্স মুহাম্মদ আলি ইবরাহিম বেএফেন্দি ও প্রিন্সেস জাহরা হানজাদ সুলতানের একমাত্র কন্যা।
বাদশাহ ফয়সাল নিম্নোক্ত সামরিক পদবীর অধিকারী ছিলেন :[৪]
জর্ডানের শহীদ দ্বিতীয় ফয়সাল কলেজ (Kolleyet Al-Shahid Faisal Al-Thani) নামক সামরিক স্কুল ফয়সালের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় ফয়সাল জন্ম: ২ মে ১৯৩৫ মৃত্যু: ১৪ জুলাই ১৯৫৮
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী গাজি |
ইরাকের বাদশাহ ৪ এপ্রিল ১৯৩৯ – ১৪ জুলাই ১৯৫৮ |
উত্তরসূরী রাজতন্ত্র বিলুপ্ত |
Titles in pretence | ||
পদবী হারানো |
— TITULAR — ইরাকের বাদশাহ ১৪ জুলাই ১৯৫৮ |
উত্তরসূরী প্রিন্স জাইদ বিন হুসাইন |