ব্যক্তিগত তথ্য | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ইকার ক্যাসিয়াস ফের্নান্দেজ[১] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ২০ মে ১৯৮১ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম স্থান | মস্তোলেস, স্পেন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৮৫ মি (৬ ফু ১ ইঞ্চি)[২] | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান | গোলরক্ষক | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যুব পর্যায় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯০–১৯৯৮ | রিয়াল মাদ্রিদ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৮–১৯৯৯ | রিয়াল মাদ্রিদ সি | ২৬ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৯ | রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়া | ৪ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৯–২০১৫ | রিয়াল মাদ্রিদ | ৫১০ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৫–২০২০ | পোর্তো | ১১৬ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৬ | স্পেন অনূর্ধ্ব ১৫ | ১ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৬–১৯৯৭ | স্পেন অনূর্ধ্ব ১৬ | ১৯ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৭–১৯৯৯ | স্পেন অনূর্ধ্ব ১৭ | ১০ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৯ | স্পেন অনূর্ধ্ব ১৮ | ৪ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৯ | স্পেন অনূর্ধ্ব ২০ | ২ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯৯–২০০০ | স্পেন অনূর্ধ্ব ২১ | ৫ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০০–২০১৬ | স্পেন | ১৬৭ | (০) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
অর্জন ও সম্মাননা
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
ইকার ক্যাসিয়াস ফের্নান্দেজ (স্পেনীয় উচ্চারণ: ; জন্ম ২০ মে ১৯৮১) একজন স্প্যানিশ গোলরক্ষক যিনি স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন। তার নেতৃত্বে স্পেন ৪৪ বছর পর, ২০০৮ সালে তাদের দ্বিতীয় এবং ২০১২ সালে তাদের তৃতীয় উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন স্পেনকে ২০১০ সালে অধিনায়ক হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ জিতানো। বিশ্বকাপের ঐ আসরে তিনি গোল্ডেন গ্লোব জিতেন। ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবরে তিনি স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা গোলরক্ষক এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে তিনি হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার সম্মান অর্জন করেন।[৩]
তাকে সর্বকালের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।[৪][৫][৬] তিনি ২০০৮ সালে ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত সেরা ৪ জনের মধ্যে একজন ছিলেন এবং জরিপে ৪র্থ নির্বাচিত হন।[৭] ২০১২ সালে তিনি উয়েফা কর্তৃক নির্বাচিত সেরা একাদশে ৬ষ্ঠবারের মত স্থান পান। ২০১১ সালের হিসাব অনুসারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কার জেতা খেলোয়ারদের মধ্যে ক্যাসিয়াস অন্যতম। ১৯৯০ সালে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলের সাথে নিজের ফুটবল জীবন শুরু করেন।১৯৯৯ সালে মূল দলে খেলার সুযোগ পান এবং ক্লাবটিতে প্রায় ১৬ মৌসুম ছিলেন। মাদ্রিদের হয়ে তিনি ৫ টি লা লিগা, ২ টি কোপা দেল রে,৪ টি স্পেনীয় সুপার কাপ,৩ টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ,২ উয়েফা সুপার কাপ ও ১ টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয় করেন।রাউল গোনসালেসের পর তিনি মাদ্রিদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়।[৮]
১৯ অক্টোবর ২০১০ সালে তিনি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা গোলকিপার হন।২০১১ সালে তিনি স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেন।[৯] সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় হন।[১০] এপ্রিল ২০১৮ তে তিনি তার পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনের ১০০০তম ম্যাচ খেলেন।[১১]ফ্রান্ৎস বেকেনবাউয়ার ও দিদিয়ে দেশঁ পর তিনি ফিফা বিশ্বকাপ,উয়েফা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ইউরো কাপ জেতা তৃতীয় অধিনায়ক।[১২]
ক্যাসিয়াস ১৯৮১ সালের ২০ মে স্পেনের মস্তোলেসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জোসে লুইস ক্যাসিয়াস তৎকালীন একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং তার মা মারিয়া দেল কারমেন ছিলেন একজন মহিলা নাপিত।[১৩] ক্যাসিয়াসের শৈশবে তার পরিবার নাভালাক্রুজ থেকে তাদের বাসা পরিবর্তন করে চলে আসেন। তার শৈশবের কয়েক বৎসর কাটে মাদ্রিদের কাছাঁকাছি এক গ্রামে তবুও তিনি মাদ্রিদকে তার নিজস্ব শহর হিসেবে বিবেচনা করে এসেছেন। ক্যাসিয়াসের ৭ বছরের ছোট ভাই হুনাই, মস্টোলেস ফুটবল ক্লাবের মাঝমাঠের একজন খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন।[১৩]
এক সপ্তাহান্তে ক্যসিয়াসের পিতা হোসে ক্যাসিয়াস তাদের বাজিতে অংশগ্রহণের জন্য গোল পূর্বাভাস পোস্ট করে আসতে বললেও শিশু ক্যাসিয়াস সেটা বেমালুম ভুলে বসেছিলেন। তার বাবা ১৪ টি খেলার প্রত্যেকটিতে সঠিক অণুমান করলেও, ক্যাসিয়াস সেটি পোস্ট না করায় তাদের পরিবার প্রায় আনুমানিক ১ মিলিয়ন ইউরো হারিয়েছিলেন।[১৪]
ইকার ক্যাসিয়াস ১৯৯০-৯১ মৌসুমে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন রিয়াল মাদ্রিদের যুবদলের হয়ে, যা তখন লা ফ্যাব্রিকা (La Fábrica) নামে পরিচিত ছিলো। ১৯৯৭ সালের ২৭ নভেম্বর মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি চ্যাম্পিয়নস লীগে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম রোসেনবর্গের খেলায় রিয়াল মাদ্রিদের সিনিয়র একাদশে ডাক পান। তবে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে তিনি সিনিয়র দলে স্থায়ীভাবে ডাক পান। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে প্রথম খেলায় তিনি মাদ্রিদের তৎকালীন গোলকিপার বোডো ইগনার এর বদলী খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন।
পরবর্তী মৌসুমে তিনি রিয়ালের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হিসেবে বোডো ইগনার এর পরিবর্তে মাঠে নামেন। তিনি ছিলেন ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে সবচাইতে কম বয়সী গোলকিপার। সেই খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ ভ্যালেন্সিয়াকে ৩ – ০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় করে যা ছিল ক্যাসিয়াসের ১৯তম জন্মদিনের মাত্র চার দিন পর।[১৫]
কিন্তু ২০০১-০২ মৌসুমে ক্যাসিয়াসের খারাপ ফর্মের কারণে সিজার সানচেজ এর কাছে প্রথম পছন্দের গোলকিপার হিসেবে তার জায়গাটি হারান। তবে ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে সানচেজের ইনজুরি ক্যাসিয়াসকে মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়। শেষ মুহূর্তে ইকারের কয়েকটি অসাধারণ সেভ রিয়াল মাদ্রিদকে বায়ার্ন লেভারকুসেনের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় এনে দেয়।
ক্যাসিয়াস তার সেরা পারফর্ম্যান্স দেখান ২০০৭-০৮ মৌসুমে। এই সিজনে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ৩১ তম লা লিগা শিরোপা জয় করে। এবং এতে অনেকাংশেই অবদান ছিলো ইকার ক্যাসিয়াসের। ইকার সেই মৌসুমে ৩৬ খেলায় মাত্র ৩২ টি গোল হজম করেছিলেন, যা তাকে জামোরা ট্রফি (Zamora Trophy) এনে দেয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইকার ক্যাসিয়াস এবং আরেক মাদ্রিদ লিজেন্ড রাউল গঞ্জালেস রিয়াল মাদ্রিদের সাথে আজীবন চুক্তিবদ্ধ হন। ক্যাসিয়াস সেই বছর রিয়াল এর সাথে তার চুক্তি ২০১৭ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করেন যা অনুসারে শেষ মৌসুমে ইকারর বাই আউট ক্লজ হবে ১১৩ মিলিয়ন ইউরো। [১৬][১৭]
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইকার ক্যাসিয়াস মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যাকো বুয়োর গোলকিপার হিসেবে ৪৫৪ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। সেই সাথে তিনি রিয়ালের হয়ে গোলকিপার হিসেবে সবচাইতে বেশি ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেন।[১৮] ২০০৯ সালের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে ম্যানচেস্টার সিটি ক্যাসিয়াসের জন্য ১২৯ মিলিয়ন বিড করেছে, স্প্যানিশ মিডিয়ায় এমন গুজব শোনা গেলেও রিয়াল মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। এছাড়াও প্রিমিয়ার লীগের আরো অনেক ক্লাবে ট্রান্সফার হওয়ার গুজব উঠলেও ইকার ক্যাসিয়াস মিডিয়ার সামনে সাফ জানিয়ে দেন যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না।[১৯][২০]
২০০৯-১০ মৌসুমের ৪ অক্টোবর সেভিয়ার বিরুদ্ধে এক খেলায় ক্যাসিয়াস অসাধারণ এক সেভ করেন; তিনি গোলবারের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটে যান এবং দিয়াগো পেরত্তির সাথে খুব কাছাঁকাছি অবস্থায় এক বনাম একের মোকাবেলায় জয়ী হয়ে পেরত্তিকে গোলবঞ্চিত করেন।[২১] খেলা শেষে স্পেনীয় গোলকিপাররা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। এমনকি ইংল্যান্ডের এর খ্যাতনামা গোলকিপার গর্ডন বাঙ্কস বলেন, “গোলমুখে ইকার ক্যাসিয়াসের প্রতিক্রিয়া (রিফ্লেক্স) অসাধারণ। এমন দ্রুত গতির রিফ্লেক্স তিনি কখনো দেখেন নি। যদি ইকার এভাবে খেলতে থাকেন তাহলে তিনি ইতিহাসের সেরা গোলকিপারের জায়গা দখল করে নেবেন।”[২২]
২০১১-১২ মৌসুমে ক্যাসিয়াস আইএফএফএইচএস (IFFHS) সেরা গোলকিপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। বুফন এর পর ইকার ক্যাসিয়াস ছিলেন একমাত্র গোলকিপার যিনি পরপর চারবার এই অ্যাওয়ার্ড জিততে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি ইকার ক্যাসিয়াস রিয়ালের হয়ে ৬০০ তম ম্যাচ খেলেন। ওই ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাও এর বিরুদ্ধে রিয়াল ৪-১ গোলে জয় পেয়েছিলো। এই জয়ের মাধ্যমে ক্যাসিয়াস রিয়ালের হয়ে তার পঞ্চম লা লিগা শিরোপা জয় করেন।
একই বছরের ২২ ডিসেম্বর মালাগার বিরুদ্ধে, তৎকালীন রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার হোসে মরিনহো ক্যাসিয়াসের জায়গায় অ্যান্তনিও আদানকে প্রথম একাদশে সুযোগ দেয়া হয়।[২৩] যার কারণে ক্লাবে খেলোয়াড় এবং ম্যানেজারের মধ্য কিছু মনোমালিন্য শুরু হয়। পরবর্তীতে ইকার ক্যাসিয়াস মিডিয়ার সামনে সেগুলো উন্মোচন করার পর রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা তাকে সাহসী গোলকিপার উপাধি দেয়।[২৪]
২০১২-১৩ মৌসুমে ইকার ক্যাসিয়াস ৫ম বারের মত আইএফএফএইচএস সেরা গোলকিপার অ্যাওয়ার্ড জেতেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মত টানা পাঁচবার এই অ্যাওয়ার্ড জয়ী গোলকিপার হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে একটি ভয়াবহ ইনজুরি ইকারকে দল থেকে ছিটকে দেয়। ম্যানেজার হোসে মরিনহো সেভিয়ার গোলকিপার ডিয়েগো লোপেজকে সাইন করান। পরবর্তীতে আদানের পরিবর্তে ইকারের জায়গায় ডিয়েগো লোপেজকে নামানো হয়। ইকার ইনজুরি থেকে ফিরে আসার পরেও তাকে দলে জায়গা দেন নি হোসে মরিনহো। ২০১২-২০১৩ মৌসুমে শেষে মরিনহো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর অনেক স্প্যানিশ খেলোয়াড় ইকারকে দলে জায়গা না দেয়ায় তার কঠোর সমালোচনা করেন।
২০১৩ সালের গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদ কার্লো আনচেলত্তিকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে। রিয়াল মাদ্রিদ এই সিজনে ২-১ এর কষ্টার্জিত জয় দিয়ে মৌসুম শুরু করে। এই ম্যাচেও ইকার ক্যাসিয়াসকে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো। ক্যাসিয়াস তার ইনজুরির ২৩৮ দিন পর গ্যালাতেসেরে এর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লীগের খেলায় মাঠে নামেন। কিন্তু মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় অসাবধানতাবশত রামোসের কনুই এর আঘাতে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন।[২৫]
২০১৩-২০১৪ মৌসুমে কার্লো আনচেলত্তি ইকার ক্যাসিয়াসকে কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়নস লীগে মাদ্রিদ গোলরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেন। এই মৌসুমে ইকার ক্যাসিয়াসের টানা ৯৬২ মিনিট গোল না খাওয়ার রেকর্ড হয়েছে, যা ভাঙে চ্যাম্পিয়নস লীগের ম্যাচে শালকে ০৪ খেলোয়াড় হান্টেলারের গোলের মাধ্যমে। ওই খেলায় রিয়াল ৬-১ গোলে জয় লাভ করেছিলো।
২০১৯ সালের ১ মে পোর্তোর সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালীন তিনি বুকের যন্ত্রণা অনুভব করেন এবং তাকে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার হৃদরোগের অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালে জানা যায় তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং সেখানে কিছুটা সুস্থ হন।[২৬] যদিও তিনি বিপদ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে সুস্থতার আশা করেছিলেন, ডাক্তাররা সতর্ক করেছেন যে তিনি আর কখনও পেশাগতভাবে খেলতে পারবেন না।[২৭]
ইকার ক্যাসিয়াস তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন স্পেন অনূর্ধ্ব-১৭দলের হয়ে; ১৯৯৭ সালের ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে। ১৬ বছর বয়সী ক্যাসিয়াস ছিলেন দলের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়। তার দল স্পেন ঐ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে। পরবর্তীতে ইকার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। এর দুই বছর পর ইকার ক্যাসিয়াস স্পেন অনূর্ধ্ব-১৯ ফিফা বিশ্ব যুব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং উয়েফা-সিএএফ মেরিডিয়ান কাপ জিতিয়ে দেন স্পেন অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে। খুব দ্রুতই স্পেন মূল দলে তার ডাক পড়ে।
ইকার ক্যাসিয়াস বর্তমানে স্পেনের হয়ে সবচাইতে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। ২০০০ সালের ৩ জুন, মাত্র ১৯ বছর ১৪ দিন বয়সে জাতীয় দলের হয়ে সুইডেনের বিপক্ষে তিনি মাঠে নামেন। ইউরো কাপ ২০০০ এ তিনি বদলী হিসেবে ছিলেন। তিনি ২০০২ বিশ্বকাপে স্পেনের ঘোষিত দলের প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। পরবর্তীতে স্পেনের প্রথম পছন্দের গোলকিপার সান্তিয়াগো ক্যানিজারেস ইনজুরিআক্রান্ত হলে ইকার ক্যাসিয়াস মাত্র ২১ বছর বয়সে স্পেনের প্রধান গোলরক্ষকের দায়িত্ব নেন। তিনি ছিলেন বিশ্বকাপে সবচাইতে কমবয়সী গোলকিপার। একই টুর্নামেন্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো পেনাল্টি শট সেভ করলে সবাই তাকে “সেইন্ট ইকার” উপাধি দেয়। সেই সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এক অসাধারণ ফিফার সর্বকালের সেরা ১০ সেভ এর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলো।[২৮]
২০০৬ বিশ্বকাপে ইকার ক্যাসিয়াস প্রথম পছন্দের গোলকিপার হিসেবে স্পেনের দলে ছিলেন। যদিও ১৬ দলের রাউন্ডে স্পেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায়।
রাউল গোনসালেসের এর পরিবর্তে ২০০৮ সালের ইউরো কাপে ইকার ক্যাসিয়াসকে স্পেনের অধিনায়কের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেই টুর্নামেন্টে ইকার ক্যাসিয়াসের দুইটি পেনাল্টি শট দুর্দান্তভাবে আটকিয়ে দিয়ে ইটালি কে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেন। ২০০৮ সালের ওই টুর্নামেন্টে সুইডেনের হয়ে ইভ্রাহিমোভিচের করা প্রথম গোলটিই ইব্রার ক্যাসিয়াসের বিপক্ষে করা সর্বশেষ গোল। ইকারের এই অসাধারণ পারফর্ম্যান্সেই ২০০৮ সালের ২৯ জুন স্পেন জার্মানিকে কে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরো কাপ জয় করে নেয়। [২৯]
২০০৮ এর অক্টোবরে ক্যাসিয়াস এবং তার সহকারী গোলকিপার পেপে রেইনা সর্বকালের জাতীয় ক্লিনশিটের রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। তারা টানা ৭১০ মিনিট ক্লিনশিট রেখেছিলেন। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাইং ম্যাচে বেলজিয়ামের ওয়েসলি সঙ্ক তাদের এই দীর্ঘ ক্লিনশিট ভাঙ্গেন।
২০০৮ সালের বালোঁ দ’অর জয়ের দৌড়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি এবং ফের্নান্দো তোরেসের পরে ক্যাসিয়াস চতুর্থ স্থান দখল করেছিলেন। একই বছর তিনি অলিভার কানকে পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা গোলকিপারের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেলজিয়ামের বিপক্ষে কোয়ালিফাইং ম্যাচে ৫-০ গোলের জয় দিয়ে ইকার ক্যাসিয়াস স্পেনের কিংবদন্তি গোলকিপার আন্দুনি জুবিজারেতা এর রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন। দুজনই ৫৬ টি ক্লিনশিট নিয়ে একই অবস্থানে ছিলেন। পরের বছর ইকার জুবিজারেতার রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে ৯৮ ম্যাচে ৫৯ ক্লিনশিট নিয়ে স্পেনের সেরা গোলকিপারের তালিকায় নাম লেখান,[৩০] যেখানে জুবিজারেতার ছিলো ১২৬ ম্যাচে ৫৬টি। ইকার ক্যাসিয়াস জাতীয় দলের হয়ে ১০০ তম ম্যাচ খেলেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। যার মাধ্যমে তিনি স্পেনের ইতিহাসের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে ১০০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেন।[৩১]
ক্লাব | মৌসুম | লীগ | জাতীয় কাপ | মহাদেশীয় | অন্যান্য | সর্বমোট | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বিভাগ | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | উপস্থিতি | গোল | ||
রিয়াল মাদ্রিদ | ১৯৯৯–২০০০ | লা লিগা | ২৭ | ০ | ৫ | ০ | ১২ | ০ | ৩ | ০ | ৪৭ | ০ |
২০০০–০১ | লা লিগা | ৩৪ | ০ | ০ | ০ | ১১ | ০ | ২ | ০ | ৪৭ | ০ | |
২০০১–০২ | লা লিগা | ২৫ | ০ | ৫ | ০ | ৯ | ০ | ১ | ০ | ৪০ | ০ | |
২০০২–০৩ | লা লিগা | ৩৮ | ০ | ০ | ০ | ১৫ | ০ | ২ | ০ | ৫৫ | ০ | |
২০০৩–০৪ | লা লিগা | ৩৭ | ০ | ২ | ০ | ৯ | ০ | ২ | ০ | ৫০ | ০ | |
২০০৪–০৫ | লা লিগা | ৩৭ | ০ | ০ | ০ | ১০ | ০ | — | ৪৭ | ০ | ||
২০০৫–০৬ | লা লিগা | ৩৭ | ০ | ৪ | ০ | ৭ | ০ | — | ৪৮ | ০ | ||
২০০৬–০৭ | লা লিগা | ৩৮ | ০ | ০ | ০ | ৭ | ০ | — | ৪৫ | ০ | ||
২০০৭–০৮ | লা লিগা | ৩৬ | ০ | ০ | ০ | ৮ | ০ | ২ | ০ | ৪৬ | ০ | |
২০০৮–০৯ | লা লিগা | ৩৮ | ০ | ০ | ০ | ৭ | ০ | ২ | ০ | ৪৭ | ০ | |
২০০৯–১০ | লা লিগা | ৩৮ | ০ | ০ | ০ | ৮ | ০ | — | ৪৬ | ০ | ||
২০১০–১১ | লা লিগা | ৩৫ | ০ | ৮ | ০ | ১১ | ০ | — | ৫৪ | ০ | ||
২০১১–১২ | লা লিগা | ৩৭ | ০ | ৪ | ০ | ১০ | ০ | ২ | ০ | ৫৩ | ০ | |
২০১২–১৩ | লা লিগা | ১৯ | ০ | ৩ | ০ | ৫ | ০ | ২ | ০ | ২৯ | ০ | |
২০১৩–১৪ | লা লিগা | ২ | ০ | ৯ | ০ | ১৩ | ০ | — | ২৪ | ০ | ||
২০১৪-১৫ | ৩২ | ০ | ০ | ০ | ১০ | ০ | ৫ | ০ | ৪৭ | ০ | ||
রিয়াল মাদ্রিদ সর্বমোট | ৫১০ | ০ | ৪০ | ০ | ১৫২ | ০ | ২৩ | ০ | ৭২৫ | ০ | ||
পোর্তো | ২০১৫-১৬ | প্রাইমেরা লিগা | ৩২ | ০ | ০ | ০ | ৮ | ০ | — | ৪০ | ০ | |
২০১৬-১৭ | ৩৩ | ০ | ০ | ০ | ১০ | ০ | — | ৪৩ | ০ | |||
২০১৭-১৮ | ২০ | ০ | ৮ | ০ | ৩ | ০ | — | ৩১ | ০ | |||
পোর্তো সর্বমোট | ৮৫ | ০ | ৮ | ০ | ২১ | ০ | ০ | ০ | ১১৪ | ০ | ||
ক্যারিয়ার সর্বমোট | ৫৯৯ | ০ | ৪৮ | ০ | ১৭৩ | ০ | ২৩ | ০ | ৮৪৩ | ০ |
স্পেন | ||
---|---|---|
বছর | উপস্থিতি | গোল |
২০০০ | ৬ | ০ |
২০০১ | ৫ | ০ |
২০০২ | ১১ | ০ |
২০০৩ | ১১ | ০ |
২০০৪ | ১২ | ০ |
২০০৫ | ১০ | ০ |
২০০৬ | ১০ | ০ |
২০০৭ | ৮ | ০ |
২০০৮ | ১৫ | ০ |
২০০৯ | ১৩ | ০ |
২০১০ | ১৫ | ০ |
২০১১ | ১১ | ০ |
২০১২ | ১৬ | ০ |
২০১৩ | ৯ | ০ |
২০১৪ | ৮ | ০ |
২০১৫ | ৫ | ০ |
২০১৬ | ২ | ০ |
সর্বমোট | ১৬৭ | ০ |
সম্মানসূচক পদক | পদকপ্রাপ্তির বছর |
---|---|
গোল্ড মেডেল অফ দা রয়েল অর্ডার অফ স্পোর্টিং মেরিট | ২০০৯[৪৩] |
ফেভারিট সন অফ নাভালাক্রুজ | ২০১০[৪৪] |
ফেভারিট সন অফ মোস্তোলেস | ২০১০[৪৫] |
রয়েল অর্ডার অফ স্পোর্টস মেরিট ক্রস | ২০১৫[৪৬][৪৭] |