জন্ম | লোচফিল্ড, এ্যায়রশায়ার, স্কটল্যান্ড | ৬ আগস্ট ১৮৮১
---|---|
মৃত্যু | ১১ মার্চ ১৯৫৫ | (বয়স ৭৩)
জাতীয়তা | স্কটিশ |
নাগরিকত্ব | যুক্তরাজ্য |
মাতৃশিক্ষায়তন | রয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনে St Mary's Hospital Medical School ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন |
পরিচিতির কারণ | পেনিসিলিন আবিষ্কার |
পুরস্কার | চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার[২] (১৯৪৫) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | অণুজীববিজ্ঞান, রোগপ্রতিরোধ বিজ্ঞান |
স্বাক্ষর | |
স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এফআরএস এফআরএসই FRCS[১] (৬ আগস্ট ১৮৮১ - ১১ মার্চ ১৯৫৫) ছিলেন এক বিশ্ববিশ্রুত স্কটিশ চিকিৎসক, অণুজীব বিজ্ঞানী, বিশ্বের প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক 'বিংশ শতকের বিস্ময়' পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের তার এই আবিষ্কার পরবর্তীতে বেঞ্জিলপেনিসিলিন তথা পেনিসিলিন-জি নামে নামাঙ্কিত হয়। 'পেনিসিলিয়াম রুবেনস' নামক এক শ্রেণীর ছত্রাক নিঃসৃত তরলকে বিশুদ্ধ করে তৈরি করেন অ্যান্টিবায়োটিক শ্রেণীর ওষুধ। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে অপর দুই ইংরেজ রসায়ন বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি ও অ্যার্নেস্ট চেইনের সাথে যৌথভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। [৩][৪][৫]চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। [৬] ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে টাইম পত্রিকার সমীক্ষায় বিশ শতকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একশো ব্যক্তিত্বদের অন্যতম বিবেচিত হন। এছাড়া ও ২০০২ খ্রিস্টাব্দের বিবিসি টেলিভিশনের সমীক্ষায় গ্রেট ব্রিটেনের একশো ব্যক্তিত্বদের অন্যতম ও ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে এসটিভি টিভি চ্যানেলের বিচারে রবার্ট বার্নস ও উইলিয়াম ওয়ালেসের পর তিনি তৃতীয় গ্রেটেস্ট স্কট নির্বাচিত হন।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-এর জন্ম ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ৬ই আগস্ট যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারের দারভেল নামক এক গ্রামে। তিনি আর্ল অব লাউডাউন, হিউ ফ্লেমিং (১৮১৬ -১৮৮৮) এবং গ্রেস স্টারলিং মর্টনের (১৮৪৮ - ১৯২৮) চার সন্তানদের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। ফ্লেমিং-এরা পুরুষানুক্রমে ছিলেন কৃষক। লেখাপড়ার চল ছিল না পরিবারে। পাঁচ বছর বয়সে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন নিতান্তই সাধারণ গ্রাম্য স্কুলে অসাধারণ মেধা ও তীক্ষ্ম ধীশক্তির আলেকজান্ডার। কিন্তু সাত বৎসর বয়সে তার পিতা মারা যান। [৭] মায়ের তত্ত্বাবধানে সবরকম দুঃখ কষ্ট দূর করে অসীম মনোবল লাভ করেন। দশ বৎসর বয়সে ভর্তি হন দারভেলের এক হাই স্কুলে। দুবৎসরের স্কলারশিপ পেয়ে সেখান থেকে এক নামকরা আবাসিক বিদ্যালয় কিলমারনক একাডেমিতে ভরতি হন। ইতিমধ্যে তার অগ্রজ টমাস ফ্লেমিং ডাক্তারী পড়তে গ্লাসগো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আলেকজান্ডারের বয়স চোদ্দ হওয়ার পর নিয়ে আসেন লন্ডনে এবং ভরতি করান রিজেন্ট স্ট্রিটের রয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনে [৮] দু-বৎসর পড়াশোনার শেষে পাশ করার পর চাকরি নেন এক জাহাজ কোম্পানীতে। এদিকে তার অগ্রজ টমাস ফ্লেমিং নামী চক্ষুবিশারদ হওয়ার পর, ভাইকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে ভরতি করান সেন্ট মেরি মেডিক্যাল কলেজে তখন তার বয়স কুড়ি বৎসর। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন।[৭]১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অণুজীববিজ্ঞানে স্বর্ণপদকসহ বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এখানে তিনি প্যাথোলজির প্রধান অধ্যাপক ড. আলমোর্থ রাইটের দ্বারা প্রভাবিত হন। অধ্যাপক রাইট ইতিমধ্যে টাইফয়েড জ্বরের প্রতিষেধক হিসাবে টিকার ব্যবহার শুরু করেছেন।
অধ্যাপক রাইটের প্রতিভা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি আর মানবপ্রেম ফ্লেমিং-কে আকৃষ্ট করে এবং তার সহকারী হয়ে যান। সেন্ট মেরি'স মেডিক্যাল স্কুলের প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেফটেন্যান্ট হন এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রয়াল আর্মি মেডিক্যাল কর্পসে ক্যাপ্টেন হিসাবে কাজ করেন। তিনি ও তার অনেক সহকর্মী যুদ্ধক্ষেত্রে ফ্রান্সের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের হাসপাতালে কাজ করেছেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন্ট মেরি'স হাসপাতালে ফিরে আসেন এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নির্বাচিত হন এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি তিন বছরের জন্য এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর হন।
সেন্ট মেরি'স হাসপাতাল ও মেডিক্যাল স্কুলে অবস্থানকালে তিনি জীবাণুবিদ্যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধে তিনি বুঝতে পারেন যে, শ্বেতকণিকা বাহিনীর ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে অধ্যাপক রাইটের মতামতও যথার্থ ছিল। তার পথই অনুসরণ করে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে মুখের ব্রণ সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লক্ষ্য করেন আহত সৈনিকদের ক্ষতস্থানে সংক্রমণের ফলে সেপসিস হয়ে তারা মারা যাচ্ছে। বিজ্ঞানী লিস্টার আবিষ্কৃত কার্বলিক অ্যান্টিসেপটিকই ছিল জীবাণুবাহিত রোগের একমাত্র ওষুধ এবং সেটি কোনভাবেই কার্যকরী হচ্ছিল না। আহত সৈনিকদের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে গ্যাংগিন রোগীদের পায়খানা পরীক্ষা করে যে জীবাণুর সন্ধান পেলেন, তার কালচারে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার কার্বলিক অ্যাসিড মেশালে আশ্চর্য দ্রুততায় জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। বিস্মিত ফ্লেমিং কার্বলিক অম্লের ব্যবহারের সাবধানবাণী শোনালেন। আর কারণ অনুসন্ধানে দেখলেন, শ্বেতকণিকারাই এই অস্বাভাবিকতার মূলে দায়ী। এই সময় তিনি দ্য ল্যানসেট নামক এক মেডিক্যাল জার্নালে এক প্রবন্ধ লেখেন। কেন অ্যানটিসেপটিকের ব্যবহারে সৈন্যরা মারা যাচ্ছে, তার পরীক্ষামূলক বিস্তৃত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তিনি অধ্যাপক রাইটের নীতি অনুসরণ করে নতুন নতুন সত্যের সম্মুখীন হতে লাগলেন । অধ্যাপক রাইট তার ব্যাখ্যা সমর্থন করলেও বেশিরভাগ চিকিৎসক সেই অ্যান্টিসেপটিকের ব্যবহার অব্যাহত রাখেন।
যুদ্ধ শেষে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সেন্ট মেরিজ মেডিকেল স্কুলে ব্যাক্টেরিয়োলোজির প্রফেসর হিসেবে যোগ দিলেন। এখানে পুরোপুরিভাবে ব্যাক্টেরিয়োলোজি নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করলেন মানবদেহের কিছু নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে যা এ বহিরাগত জীবাণু প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু প্রত্যক্ষ কোন প্রমাণ পেলেন না। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে হঠাৎ একদিন ল্যাবরেটরিতে বসে কাজ করছিলেন ফ্লেমিং। এই সময় তিনি সর্দিকাশিতে ভুগছিলেন। প্লেটে জীবাণু কালচার নিয়ে কাজ করার সময় তার একটু সর্দি এসে পড়ে প্লেটে। প্লেটটা এক পাশে সরিয়ে রেখে, নতুন এক প্লেট নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যান। পরদিন ল্যাবরেটরিতে ঢুকে দেখেন আগের দিনে টেবিলে সরিয়ে রাখা প্লেটে যে জীবাণু ছিল, পরীক্ষা করে দেখেন সেগুলিতে আর কোন জীবাণু নেই। সব জীবাণু মারা গেছে। সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন চোখের জল, মুখের লালা, নাকের নিঃসৃত জলীয় অংশের জীবাণু ধ্বংসের ক্ষমতা আছে। তিনি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে দেহ নির্গত হওয়া এই প্রতিষেধকের নাম দেন লাইসোজাইম। তবে সাধারণ জীবাণুগুলোকে এটি ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও অধিক শক্তিশালী জীবাণুর ক্ষেত্রে কার্যকরী নয়।
আমি যখন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে সেপ্টেম্বর ভোরে জেগে উঠি, আমি অবশ্যই বিশ্বের প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যাক্টিরিয়া ঘাতক আবিষ্কার করে ওষুধে বিপ্লব আনার পরিকল্পনা করিনি। তবে আমি মনে করি, আমি সঠিক করেছি
— আলেকজান্ডার ফ্লেমিং [৯]
অধ্যাপক রাইটের জীবাণুবিদ্যা বিভাগের সহকারী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। সেপ্টেম্বর মাসে যখন তিনি টাইফয়েড রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজ করছিলেন, সেই সময় তার 'স্ট্যাফাইলোকক্কাস' নামক এক ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ চলছিল। তিনি একদিন ব্যাকটেরিয়া জন্মাবার পাত্র পরিষ্কার না করে ফেলে রাখেন। কিছুদিন পর তিনি লক্ষ্য করেন, জীবাণু কালচারের উপর ভাগে কেমন নীলাভ ছাতা পড়েছে, কিন্তু তার চারপাশ বরাবর কোন ব্যাকটেরিয়া নেই আর জন্মাচ্ছেও না। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে সেপ্টেম্বর ফ্লেমিং নিশ্চিত হন যে পেনিসিলিয়াম নামক খুব সাধারণ এক ছত্রাকের কারণে ঠিক এমনটাই হচ্ছে। নষ্ট পনীরের ছত্রাকই হল সাধারণ পেনিসিলিয়াম ছত্রাক। জ্যাম বা জেলির ওপরেও এগুলি পড়ে।এই ছত্রাক নিঃসৃত তরল নিয়ে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কাজ করেন একে ছত্রাক থেকে আলাদা করতে এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতে। শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণ রসায়ন বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি এবং অ্যার্নেস্ট বরিস চেইন এই কাজে তার সঙ্গী হন। তিনজনের প্রচেষ্টায় পেনিসিলিনের রাসায়নিক কাঠামো ও পৃথকীকরণের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হল। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ হতেই চিকিৎসায় পেনিসিলিনের ব্যবহার শুরু হল। বিজ্ঞানীরা পেনিসিলিনের নাম দিলেন - বিশ শতকের বিস্ময়।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সারা জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্মাননাগুলি হলো -
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেই ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে ডিসেম্বর সারা মরিসন ম্যাকেলবয়কে বিবাহ করেন। সারা মরিসন অবশ্য ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তাদের এক পুত্র রবার্ট ফ্লেমিং ততদিনে একজন চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। আলেকজান্ডার ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে বাহাত্তর বৎসর বয়সে পুনরায় বিবাহ করেন জীবাণুতাত্ত্বিক ডক্টর আমেলিয়া কোৎসুরিস কে।
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং লন্ডনে তার নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন এবং তার পার্থিব শরীর সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রালে সমাহিত করা হয়।
জীবনী বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |